হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় বর্তমানে প্রায় চার হাজারের মত ওষুধ আছে। ব্যাপক অর্থে বলা যায় এরা সবাই কম বেশী এন্টিসোরিক। সর্ব প্রধান এন্টি-সোরিক বা এন্টি-সোরিক ওষুধের রাজা হচ্ছে সালফার। রাজার কথা আমরা আগে শুনেছি, আজকে আমি এন্টি-সোরিক রানীর গল্প শোনাব।
রাজাকে দিয়ে যে কাজ সমাধান হয়না, অনেক সময় রানীকে দিয়ে তা অনায়াসে সমাধান করা যায়। রাজার কাজ তরবারি উঁচু করে বিদ্রোহী সোরাকে দমন করা। রাজা যে বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ হন সেখানে ডাক পড়ে রানীর। রানীর আবার বিশেষ সুবিধা এই যে, মহাপরাক্রমশালী সোরার সবচেয়ে উঁচু খান্দান স্কাবিজ বংশে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। হানেমানের হাতে শক্তিকৃত হয়েই তিনি রানী হতে পেরেছেন। সোরা বংশের মেয়ে হবার কারণে সোরার সকল অলিগলি ফন্দি ফিকির সবই তার নখদর্পনে, তাই লক্ষণ সদৃশে সোরার ক্ষতিকর উচ্ছ্বাসকে দমন করতে রানীর বিশেষ বেগ পেতে হয়না। সোরা থেকে সোরি আর ল্যাটিন পদবী NUM যোগ করে হানেমান এই রানীর নাম রাখলেন সোরিনাম।
এ ওষুধটির সোরা দমনের ক্ষমতা দেখে ডাঃ হানেমান বলেন যখন সুনির্বাচিত ওষুধ কোন ভালো ফলাফল দিতে পারে না এবং রোগী সোরা দোষদুষ্ট বলে প্রতীয়মান হবে তখন তাকে সোরিনাম প্রদান কর, সোরিনাম একটি বৃহৎ এন্টিসোরিক ও পলিক্রেষ্ট ওষুধ।
সকল মেটেরিয়া মেডিকা ও রেপার্টরীতে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এ ওষুধটির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
উপযোগিতা:
- ধাতুগত বা বংশগত চর্মরোগের ইতিহাস।
- বহুদিনের পুরাতন ব্যাধিতে সুনির্বাচিত ওষুধ ব্যর্থ হলে ।
- সালফারের লক্ষণ থাকায় প্রয়োগের পর কোন কাজ না করলে।
- কোন কঠিন পীড়ায় প্রতিক্রিয়ার অভাব।
- নতুন রোগ সেরে যাওয়ার পর পূর্ব স্বাস্থ্য ফিরে না পেলে।
- তরুণ রোগ বহু বছর পূর্বে অসম্পূর্ণভাবে আরোগ্য হলে যে পুরাতন পীড়া জন্মে তাতে (C.V) সোরিনাম উপযোগী। (ডাঃ ন্যাশ)।
- সোরিনাম চাপা পড়া চর্মরোগের কুফলের জন্যও উপযোগী হয় থাকে। (ডাঃ ন্যাশ)।
- সোরা বা সোরা ধাতু দূর করার জন্য সোরিনাম প্রয়োগ করা ধর্তব্য নয়। অন্যান্য ওষুধের ন্যায় লক্ষণ সমষ্টির উপর দৃষ্টি রেখে রোগীর ব্যক্তিগত চরিত্রের সহিত মিললে প্রয়োগ করতে হয় এবং তাহলে এর আশ্চর্য জনক ক্রিয়া উপলদ্ধি করা যায়। (ডাঃ এলেন)।
- সোরিনামের লক্ষণ গুলো প্রায় সমস্তই সালফারের মত, সোরিনাম সোরা বিষ ও সালফার সোরার সদৃশ ওষুধ। গুলো প্রায় সমস্তই সালফারের মত, সোরিনাম সোরা বিষ ও সালফার সোরার সদৃশ ওষুধ।
মানসিক লক্ষণ:
দুঃখ, নৈরাশ্য, সে তাহার মাথার উপরে যে মেঘ নামিয়াছে, তাহার মধ্য দিয়া কোন আশার আলো দেখেনা; তাহার চারিদিকেই (নৈরাশ্যের) ঘোর অন্ধকার। সেভাবে তাহার ব্যবসায় ফেল মারিতেছে। সে দরিদ্র হইতে চলিয়াছে। সে তাহার স্রষ্টার অনুগ্রহ পাইবার দিনটি নিজকৃত পাপে নষ্ট করিয়া ফেলিয়াছে। ইহা তাহার দিনের বেলার একটা নিশ্চিত ধারণা এবং রাত্রিতে সে উহাই স্বপ্ন দেখে অভিভুত হইয়া পড়িতে হয় এমন দুঃখ বোধ, মুসড়াইয়া পড়া পরিবারের মধ্যে থাকিয়াও সে কোন আনন্দ পায় না। সে ভাবে এ আনন্দের সে অংশীদার নহে, ইহা তাহার জন্য নয়। তাহার ব্যবসা কিন্তু ভালোই চলিতেছে তবু তাহার মনে হয় সে যে গরীব হইতে চলিয়াছে, সে নির্জনে থাকিতে চায়। সম্মান করিতে চায়না। উৎকন্ঠায় পূর্ণ এমন কি আত্মহত্যা করার চিন্তা করে। পীড়িত থাকিলে হতাশা যে, আর ভালো হইবে না।
সোরিনামের মূল সুর বা কীনোট:
- ডাঃ ডব্লিউ এইচ বার্ট বলেন- সালফার নির্দেশিত পীড়ায় সালফার বিফল হলে সোরিনাম।
- ডাঃ এম এল টাইলার বলেন- সোরিনাম হচ্ছে শীতার্ত সালফার। রোগীর অসুস্থতা থেকে উঠার পর স্বাস্থ্যের ক্রমোন্নতি অতি মন্থর, শীতকাতর, দুর্গন্ধ তৎসহ আরোগ্য সম্পর্কে হতাশা ইত্যাদি হচ্ছে সর্বপ্রধান লক্ষণ।
- ডাঃ ইবি ন্যাশের মতে সর্বপ্রকার স্রাব ও নিঃসৃত বায়ুতে অত্যাধিক দুর্গন্ধ। চর্ম নোংরা অপরিচ্ছন্ন আকৃতির, মনে হয় যেন রোগীকে কখনো ধোয়ানো হয়নি এবং দেহ নিঃসৃত বদ গন্ধ গোছলের পরও থেকে যায়। মনের দিক থেকে সোরিনাম অত্যন্ত অবসাদিত। ঠান্ডা বাতাসে অথবা আবহাওয়ার পরিবর্তনে অতি সংবেদনশীল রোগী। বহু বছর পূর্বের অসম্পূর্ণ আরোগ্য প্রাপ্ত একিউট পীড়া বা চাপা পড়া একিউট ব্যাধির ক্রনিক রূপ লাভ।
চরিত্র নির্দেশক লক্ষণ:
- সোরিনাম ১ম শ্রেণীর শীতকাতর। প্রচন্ড গরমের সময় কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমায়, রোগী মাথা গরম রাখতে চায়। গ্রীষ্মকালেও গরম পোষাক চায়। লোমের টুপি, ওভারকোট, শাল পরতে চায়। (ডাঃ ন্যাশ)।
- যে সব শিশুরা অত্যন্ত অপরিস্কার নোংরা দূর্গন্ধ স্থানে প্রতিপালিত এবং যে সকল শিশুর প্রায়ই গাল গলা ও ঘাড়ের গ্ল্যান্ড ফোলে, চিররুগ্ন ও পীড়িত, যাদের আকৃতি কদাকার, চোখের প্রদাহ থাকে, কান থেকে দূর্গন্ধ পূঁজ বের হয়, নাকে সর্দি ঝরে, রাক্ষুসে ক্ষুধা সত্ত্বে ও খানা গায়ে লাগেনা, পেটটা বড় ও উঁচু ঢেকুর তোলে, নিঃসৃত বায়ুতে বিশ্রী ডিম পঁচার মত দূর্গন্ধ থাকে, মন সদাই বিষন্ন; চিন্তাকুল, কিছুতেই সুখ নেই।
- শরীরের, বিশেষতঃ মুখমন্ডলের চর্ম ভালোভাবে ধোয়ানো হলেও ময়লা দেখায়। অপরিষ্কার দাগ পড়া মলিন চর্ম। চর্ম খসখসে সহজে ফেটে যায়, ফাটা থেকে রক্ত পড়ে, আঁশের ন্যায় মামড়ি পড়া হয়। চর্ম ধুয়ে পরিষ্কার রাখা যায় না, চর্মের অনেকগুলো রোগ স্নান করলে খারাপ হয়। গরম হলে চর্ম চুলকায়, পশমের পোষাক পরলে চুলকায়, শয্যায় উত্তপ্ত হলে চুলকাতে থাকে, সে চুলকাতে চুলকাতে ছাল তুলে ফেলে। তারপর ঐ স্থানে মামড়ি পড়ে। আরোগ্য হয়ে গেলেও স্থানটি চুলকাতে থাকে এবং তখনও তাকে চুলকাতে হয়। মাথা ও মুখমন্ডলে একজিমা, মামড়িতে মাথা ঢেকে যায় চুল ওঠে যায়, রসানি দ্বারা মামড়িগুলো পুরু হয়ে যায় এবং নতুন একদল ফুস্কুড়ি প্রকাশ পায়। ঐস্থান হতে হাত সরাতে পারে না। রাত্রে বৃদ্ধি বিছানার গরমে বৃদ্ধি উষ্ণ বাহ্য প্রয়োগে বৃদ্ধি যা কিছু ঐ স্থানে বায়ু লাগা প্রতিরোধ করে তাতেই বৃদ্ধি, ঠান্ডা বাতাসে উপশম এবং গায়ে কাপড় দেয়ায় বৃদ্ধি এই অবস্থাটা সোরিনামের সাধারণ লক্ষণের বিপরীত। (ডাঃ কেন্ট)।
- সোরিনামের দূর্গন্ধ চরিত্রগত লক্ষণ রূপে আগাগোড়া বর্তমান থাকে। পঁচাগন্ধ; পঁচাগন্ধ নিঃশ্বাস, চর্ম থেকে নির্গত স্রাব গলিত মাংসের ন্যায় দূর্গন্ধ, যে কোন ধরনের মলই হোক না কেন সারা বাড়ী গন্ধে ভরে যায়। প্রদর স্রাব এবং ঋতু স্রাবে ভয়ানক দূর্গন্ধ, উদগারে পঁচা ডিমের গন্ধ। এই ওষুধটি সেই লোকটির প্রয়োজন হয় যাকে দেখতে বিশ্রী, যার গন্ধ বিশ্রী। (ডাঃ কেন্ট)।
- সর্দি লাগার প্রবণতা। ঘন হলদে স্রাবযুক্ত সর্দি কিছুকাল শুষ্ক থাকে এবং কিছুকাল সর্দি গড়িয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে প্রায়ই নাক ঝাড়তে হয় কিন্তু কোন স্রাব থাকে না। সর্দি সারা বছর লেগে থাকে। বর্ষাকালে সর্দি থাকে। এই অবস্থা ওষুধি গন্ধ জ্বরের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্বন্ধযুক্ত ওষুধি গন্ধজ্বর এমন একটি অবস্থা যার ওষুধ নির্ণয় করা কঠিন। এটি দুষ্ট প্রকৃতির ধাতুগত অবস্থা এবং ওই ধাতুগত অবস্থা দূর হলে ওষুধি গন্ধ জ্বরের নিবৃত্তি হয়। এর চিকিৎসার জন্য সোরাধাতুদোষই দূর করা প্রয়োজন। কয়েক বছরে অধিকাংশ রোগীকেই পরিবর্তন করা যায় কিন্তু এক বছরে নয় সুতরাং নিরাশ হয়োনা। সর্দ্দিজ অবস্থার ওষুধি গন্ধজ্বরের আরম্ভ প্রায়ই কোন অচিকিৎসিত দুষ্ট প্রকৃতির জ্বর হতে হয়ে থাকে। (ডাঃ কেন্ট)।
- সোরিনাম নিজেই একটি দুর্বলতা বিশিষ্ট ব্যক্তি। দুর্বলতার জন্য হাঁটতে চায় না। খোলা বাতাসেও খারাপ থাকে। দাঁড়িয়ে নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। সে বাড়ী গিয়ে শুয়ে পড়তে চায়। হাঁপানি এবং হৃদপিন্ড সংক্রান্ত শ্বাসকষ্টে সে গরম স্থান, শুইয়ে পড়া ও একাকি থাকা চায়। দৈহিক কাজ কর্ম ধীরে ধীরে করে। একপ্রকার পক্ষপাতিক দুর্বলতা। জ্বরের পর সে সেরে উঠে না। তার হজম ক্রিয়ায় ধীর গতি। মল স্বাভাবিক থাকে। তথাপি চেষ্টা করে মল নির্গত করতে হয়। মূত্রথলি পূর্ণ থাকলেও তা ধীরে ধীরে নির্গত হয়। সে কখনো একবারে মল মূত্র ত্যাগ করে শেষ করতে পারে না। নরম মল কষ্টে নির্গমন।
- রাক্ষুসে ক্ষুধা। পুঁয়ে পাওয়া ছেলে মেয়েদের ক্ষুধা বেশী। ক্ষুধা যেমন প্রবল, খায়ও তেমনি রাক্ষসের মত, কিন্তু দুর্বলতাবশতঃ কিছুই হজম করতে পারে না। প্রায়ই উদরাময়ে ভোগে। উদরাময় রাত্রে বৃদ্ধি সে সাথে দূর্গন্ধ থাকেই থাকে। অত্যাধিক ক্ষুধার জন্য ছোট শিশুদের শিয়রে খাবার রেখে দিতে হয়। ক্ষুধার সময় না খেতে পেলে মাথা ধরে। রাতের মধ্য ভাগে ক্ষুধার্ত হয়। এই সময়ে কিছু খেতে বাধ্য হয় (ডাঃ এলেন)
- রোগী যেখানে প্রথম অবস্থায় সালফারের মত ছিল, গরম সহ্য করতে পারত না। কিন্তু সম্প্রতি কোন কঠিন তরুণ রোগাক্রমনের পর হতে বা চর্মরোগ চাপা দেবার পর হতে দুর্বল ও শীর্তাত হয়ে পড়েছে সেখানে সোরিনাম প্রায় বেশ উপকারে আসে।
বিশেষ, একক, অদ্ভুত, অসাধারণ, বিরল লক্ষণ:
- হাঁপানী বা শ্বাসকষ্টের সময় সে হাত দুইটি ছড়াইয়া দিয়া বিছানার দুই দিকে দুই হাত রাখিয়া শুইয়া থাকে। ইহাতে তাহার শ্বাস লওয়ার সুবিধা হয় ও তাহার বুকটি যথাযথ কাজ করিতে থাকে। একক ও অদ্ভুত লক্ষণ।
- মাথা ধরে যায়, কাশি আসে বা শীতের সময় মাথা ধরা সহ পর্যায়ক্রমে উদ্ভেদ দেখা দেয়।
- মাথার চামড়া ঠান্ডা, রোগী গরমের সময়েও পশমী টুপি পরে, মাথা খোলা রাখিলেই তাহার খারাপ লাগে। (Silicea) চুল কাটিলে পীড়িত হয়- বিরল লক্ষণ।
- প্রচন্ড গরমের সময় রোগী কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমায়। (অদ্ভুত লক্ষণ)।
- পুরুষ সঙ্গম করিতে পারে ও তাহার লিঙ্গোদ্রেকও হয় কিন্তু সেই পুরুষটির মনে আনন্দ জাগেনা। (অদ্ভুত লক্ষণ)।
- গলক্ষত, টনসিল দুইটি অত্যন্ত ফোলা, গিলতে কষ্ট ও বেদনা। গিলতে গেলে বেদনা কান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। প্রচুর দূর্গন্ধ লালাস্রাব। আঠার ন্যায় শ্লেষ্মার জন্য সর্বদা গলা খাঁকারি দিতে হয়। এতে শুধু তরুন আক্রমনটিই সারে না, প্রবনতাটিও দূর হয়।
- খকখক করা কাশি, মটরের আকার, পনিরের মত গয়ার তোলে, কফের স্বাদ বিরক্তিকর পঁচা মাংসের ন্যায়, চর্মরোগ চাপা দেয়ার পর কাশি।
- চোর, ডাকাত, বিপদ ইত্যাদি স্বপ্ন দেখে নিদ্রা শূন্যতা।
- ঋতুস্রাব- দীর্ঘকাল স্থায়ী ঋতুস্রাব, গর্ভস্রাবের পর, গর্ভফুল নির্গত হবার পর, কয়েকদিন পর পর উজ্জল লাল রক্তস্রাব। উঠে দাঁড়ালে এমনি নতুন করে উজ্জল লাল রক্তস্রাব দেখা দেয়। স্থায়ী আরোগ্য প্রবণতা থাকে না। এরূপ অবস্থায় সাধারণ দুইটি ওষুধ সালফার কিম্বা সোরিনাম।
- কান পাকা, তাতে কলতানির মত অতি দূর্গন্ধ স্রাব। মাংস পঁচার মত দূর্গন্ধ। পুরাতন কান পাকা রোগ হাম বা জ্বরের পরবর্তী কান পাকা।
- জ্বর- উত্তাপ এত বেশী যেন আচ্ছাদন বস্ত্রের মধ্যে হাত দুইটি বাষ্পের মধ্যে রহিয়াছে। শরীরে হাত দিলে হাত যেন পুড়ে যায়। সকল প্রকার জ্বরে সে সিদ্ধ হবার ন্যায় ঘামে আবৃত থাকে। সে ভীষণ দূর্বল ও অবসন্ন হয়ে পড়ে। সে শুয়ে থাকতে চায় শীত এত নয় কিন্তু প্রবল উত্তাপ থাকে, প্রবল ঘাম থাকে। সে প্রায় আচ্ছন্ন নিদ্রার মধ্যে থাকে, হতবুদ্ধি ভাব, বিহবল অবস্থা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। মুখমন্ডল ফোলা ফোলা এবং চিত্র বিচিত্র হয়ে পড়ে।
- রোগ আক্রমনের পূর্বদিন অস্বাভাবিক রূপে ভালো থাকা বা সুস্থ্যবোধ করা সোরিনামের একক লক্ষণ।
- টাকা দিলে খুশি হয়- একক লক্ষণ।
- রাতে ঘুম ভাঙ্গার পর সোরিনামের রোগীকে কিছু একটা অবশ্যই খেতে হয়- একক লক্ষণ।
- যে কোন স্থান থেকে আসার পর শুইতে হয়- দৃষ্টি আকর্ষনীয় লক্ষণ।
- সঙ্গমে বীর্যপাত হয়না -অদ্ভুত, বিরল লক্ষণ।
- রাতে অনিচ্ছায় বিছানায় মলত্যাগ- বিরল লক্ষণ।
- ক্ষুধা পেলে মাথা ব্যথা হয়- বিরল লক্ষণ।
সোরিনাম সম্পর্কে কয়েকজন বিশ্ব বরণ্য ডাক্তারের গুরুত্বপূর্ণ মতামত:
1. Pocket Manual of Homeopathic Materia Medica গ্রন্থে ডাঃ উইলিয়াম বরিক বলেন- সোরিনাম একটি শীতল ওষুধ, গরম কালেও শীত বস্ত্রে আবৃত হয়ে থাকে। দেহে প্রতিক্রিয়ার অভাব থাকে, তরুন রোগ ভোগের পর দূর্বলতা থেকে গেলে, গন্ডমালা ধাতু, দেহ হতে দূর্গন্ধ বের হয়, সকল স্রাব দুর্গন্ধময়, বিষন্নতা ও রোগারোগ্য হতাশা। পুরাতন চক্ষুপ্রদাহ, অসহনীয় চুলকানিযুক্ত কানের চতুর্পাশ্বের একজিমা হতে দুর্গন্ধ রস নির্গমন, পুরাতন পূঁজময় টনসিল প্রদাহ। সর্বদা ক্ষুধার্ত এমনকি মধ্যরাতে জেগে উঠে তাকে অবশ্যই কিছু খেতে হয়। রুগ্ন গন্ডমালা ধাতুর শিশুদের কোষ্ঠবদ্ধতা। নখের চতুর্দিকে উদ্ভেদ। অপরিষ্কার, মলিন, নোংরা চর্ম ও অসহনীয় চুলকানিযুক্ত চর্মরোগ ইত্যাদিতে সোরিনাম কার্যকরী।
2. Text book of Materia Medica গ্রন্থে ডাঃ সি লিপে বলেন- দেহের তেজস্কর নির্গমন হেতু প্রচন্ড দূর্বলতা অথবা তীব্র তরুন রোগের আক্রমনের পরবর্তী অবস্থায় বিশেষত টাইফাস রোগের পর।
3. Comparative Materia Medica গ্রন্থে ডাঃ ই এ ফ্যারিংটন বলেন ভেজা দদ্রুবৎ উদ্ভেদ তৎসহ অসহনীয় চুলকানি এবং জ্বালা, খোশ পাঁচড়া বা স্কাবিস চাপা দেয়ার কুফল, মধ্যরাতের পূর্বে ও খোলা বাতাসে বৃদ্ধি।
4. Lectures of Homeopathic Materia Medica গ্রন্থে ডাঃ জেমস টাইলার কেন্ট বলেন সালফারের সঙ্গে সোরিনামের সাদৃশ্যতা ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। খোলা বাতাসে সে শ্বাস নিতে পারেনা। দাঁড়িয়ে থাকলে শ্বাস নিতে পারেনা। সুতরাং রোগী বাড়ি গিয়ে শুয়ে পড়তে চায়, যাতে সে শ্বাস নিতে পারবে। তার শ্বাসকষ্ট আছে, সে হাত দুটি ছাড়িয়ে দিয়ে বিছানার দুদিকে দুহাত রেখে শুয়ে থাকে। তাতে তার শ্বাস নিতে সুবিধা হয় ও বুকটি যথাযথ ভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়।
5. Homeopathic Therapeutics গ্রন্থে ডাঃ লিলিয়েন্থাল বলেন- চর্ম উদ্ভেদ গ্রীষ্মকালে থাকে না কিন্তু যখনই শীতল আবহাওয়া দেখা দেয় তখনই পুনঃ প্রত্যাবর্তন করে।
6. The Rheumatic Remedies গ্রন্থে ডাঃ এইচ এরবার্টস বলেন- সোরা থেকে উৎপন্ন হৃদআবরনী প্রদাহে কার্যকরী, যদি শুয়ে থাকলে উপশমিত হয়। প্রচুর ঘর্ম যা সকল রোগেরই বৃদ্ধি ঘটায়।
বৃদ্ধি: সর্ব প্রকার ঠান্ডায়, আবহাওয়ার পরিবর্তনে, বিশেষ করিয়া ঝড় বিদ্যুৎপূর্ন আবহাওয়ায় শীতের শুষ্ক ঠান্ডায়, বিছানার গরমে চর্মরোগের বৃদ্ধি (চুলকানির পর ঠান্ডা ও মুক্ত বাতাস আকাংখা করে)। সন্ধ্যাকালে, মধ্যরাত্রির পূর্বে, কফির গন্ধে, চুকাগন্ধে, রন্ধিত মাংসের গন্ধে, ফল ও সবজী আহারে, বিশেষ করিয়া আলু, ডিম, দুধ, মধু সেবনে এবং স্তনদানে বৃদ্ধি লক্ষণ দেখা যায়।
হ্রাস: শয়নে, ঘরের ভিতরে, আহারে মাথা ব্যথার উপশম, নাসিকা হইতে রক্তস্রাবে ও জোরে চাপনে।
মর্মবাণী:- ধাতুগত বা বংশগত চর্মরোগের ইতিহাস। সোরিনাম হচ্ছে শীতার্ত সালফার।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!