আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) দীর্ঘ ১০ মাস ধরে আটকে থাকা মার্কিন নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন। দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকার পর আগামী বুধবার (সম্ভাব্য) তাঁদের ফেরানো হবে বলে জানিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানে করেই তাঁরা পৃথিবীতে ফিরবেন।
কেন আটকে ছিলেন তাঁরা?
সুনিতা ও বুচ গত বছরের জুন মাসে বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। তবে মহাকাশযানটিতে ত্রুটি দেখা দিলে সেটি খালি অবস্থায় পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হয়, কিন্তু দুই নভোচারী মহাকাশেই থেকে যান। এরপর থেকেই তাঁদের ফিরিয়ে আনার নানা পরিকল্পনা করে আসছিল নাসা। অবশেষে স্পেসএক্সের ক্রু-১০ মিশনের মাধ্যমে তাঁদের ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
স্পেসএক্সের মাধ্যমে ফেরার প্রস্তুতি
গত শুক্রবার গ্রিনিচ মান সময় রাত ১১টা ৩ মিনিটে নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি ২৯ ঘণ্টা মহাকাশে ভ্রমণের পর আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে পৌঁছায়। এই মিশনের মাধ্যমে চার নতুন নভোচারী মহাকাশ কেন্দ্রে অবস্থান নেবেন এবং পরিবর্তে সুনিতা, বুচসহ আরও দুই নভোচারী পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।
রাজনীতির ছায়া
নভোচারীদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় রাজনীতিরও একটা ভূমিকা ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পরই নাসাকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। এমনকি স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কও দ্রুত অভিযান শুরুর পক্ষে ছিলেন। তবে ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা দাবি করেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সুনিতা ও বুচকে মহাকাশে ফেলে রেখেছিলেন, যদিও এ ধরনের দাবির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ফেরার পথে বাধা কী?
যদিও নভোচারীদের ফেরার দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে, তবে আবহাওয়া, মহাকাশযানের কারিগরি অবস্থা ও উদ্ধার দলের প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে তাঁদের ফেরার দিনক্ষণ পিছিয়ে যেতে পারে। নাসা জানিয়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্ধারিত সময়েই তাঁরা পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।
পৃথিবীতে ফেরার পর কী হবে?
দীর্ঘ ১০ মাস মহাকাশে অবস্থান করার কারণে তাঁদের শরীরে শূন্য মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব পড়েছে। ফলে পৃথিবীতে ফেরার পর তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকার কারণে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে, রক্ত সঞ্চালন ও পেশির সক্ষমতাও কমে যেতে পারে। তাই ফেরার পর তাঁদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
অপেক্ষার শেষ, নতুন যাত্রার শুরু!
সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরের ফেরার অপেক্ষায় শুধু নাসা নয়, গোটা বিশ্ব। মহাকাশে কাটানো দীর্ঘ সময়, নতুন অভিজ্ঞতা আর শূন্য মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব তাঁদের শরীর ও মনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!