মায়ের অভিযোগ: বিচার কি আদৌ হবে?
গতকাল (১৫ মার্চ) অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগম এক বছরের এই শোকাবহ দিনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ে আজ কবরে শুয়ে আছে, কিন্তু দোষীরা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি বিচার চাই।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘পুলিশ তদন্তে গাফিলতি করছে, বিশ্ববিদ্যালয়ও সহযোগিতা করছে না। মামলার আগের তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হয়ে গেছেন, নতুন যিনি এসেছেন, তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগই করেননি।’
পুলিশ কী বলছে?
তদন্ত কর্মকর্তা, কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানান, ‘আমরা পরিবার ও সাক্ষীদের কাছ থেকে যথেষ্ট সহায়তা পাচ্ছি না। তবে মুঠোফোনের ফরেনসিক পরীক্ষায় কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, দ্রুত তদন্ত শেষ করার চেষ্টা চলছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
তাহমিনা বেগম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ফোন করলে তিনি বলেন, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কী ব্যবস্থা, সেটা বলেননি। কোষাধ্যক্ষও রেজিস্ট্রারের কাছে যেতে বলেন, আর রেজিস্ট্রার আমাকে আদালতের কাছে জানতে বললেন। আমি বিচার চাইব কার কাছে?’
আত্মহত্যার পেছনে কী ঘটেছিল?
২০২৪ সালের ১৫ মার্চ কুমিল্লার নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। তাঁর মা অভিযোগ করেন, সহপাঠী রায়হান সিদ্দিক আম্মান দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতন করছিল। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, বরং তিনি উল্টো অবন্তিকাকে অপমান করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত ও সিদ্ধান্ত
অবন্তিকার মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে গত ২ জানুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয় এবং নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়:
রায়হান সিদ্দিক আম্মানের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা বোর্ডে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ।
লাকি আকতার ও রাগিব শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ।
অধ্যাপক সরকার আলী আক্কাস ও মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত।
সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামের বিষয়ে আদালতের রায়ের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মায়ের ক্ষোভ: ‘এই বিচারে কোনো যৌক্তিকতা নেই’
অবন্তিকার মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তরা তো বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে বের হয়ে গেল। তাহলে শৃঙ্খলা বোর্ড কী শাস্তি দেবে? আমি চাই, তাদের আজীবন বহিষ্কার করা হোক ও সার্টিফিকেট বাতিল করা হোক।’
অবন্তিকার পরিবারের দাবি, প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে থাকবে। কিন্তু বিচার আদৌ হবে কি না, সেই প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!