ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করতে সরকারের উদ্যোগের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন চালকরা। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবরোধ করে জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়েছেন তারা। পেছনে ছিলেন মালিকরাও।
বিআরটিএর শাস্তিমূলক নির্দেশনা প্রত্যাহার
অটোরিকশার চালক-মালিকরা নির্ধারিত ভাড়া ও জমার হার না মেনে স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরেই। বিআরটিএ যখন নতুন করে শৃঙ্খলা ফেরাতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয়, তখনই চালকরা রাস্তায় নামেন। গতকাল রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে রামপুরার বনশ্রী, মিরপুর, গাবতলী, তেজগাঁও, শনির আখড়া, দোলাইরপাড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে চালকরা সড়ক অবরোধ করেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, সৃষ্টি হয় তীব্র ভোগান্তি।
যাত্রী শাওকাত হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “চালক ও মালিকদের দাবিদাওয়া থাকতেই পারে, কিন্তু এজন্য পুরো শহরের মানুষকে জিম্মি করা ঠিক নয়। আইন মানতে বললেই যদি তারা সড়ক অবরোধ করে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?”
সরকারের এক উপদেষ্টা জানান, চালক ও মালিকদের এই প্রতিবাদের ফলে সচিবালয়ে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে অংশ নিতে কয়েকজন উপদেষ্টা দেরি করেন। দিন শেষে, সরকার চাপের মুখে পড়ে বিআরটিএর শাস্তিমূলক নির্দেশনা প্রত্যাহার করে। এর ফলে আগের মতোই যাত্রীদের ইচ্ছামতো ভাড়া দিতে হবে, নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে হলে চালকদের অনুরোধ করতে হবে, এবং মালিকরা চালকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত জমা আদায় চালিয়ে যাবেন।
দুই দশকের নৈরাজ্য
২০০৩ সালে ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালু হয়। প্রথমদিকে নির্ধারিত ভাড়ায় চললেও ধীরে ধীরে বেআইনি ভাড়া আদায়ের প্রবণতা বাড়ে। বর্তমানে নির্ধারিত ভাড়া ৪০ টাকা হলেও, বাস্তবে স্বল্প দূরত্বে যেতেও যাত্রীদের গুনতে হয় ১৫০-২৫০ টাকা পর্যন্ত।
বিআরটিএ নির্ধারিত জমা ৯০০ টাকা হলেও, মালিকরা চালকদের কাছ থেকে ১,৬০০-১,৮০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। মালিক ও চালকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে যাত্রীরা নিয়মিতই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
শাস্তির বিধান থাকলেও প্রয়োগ নেই
২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে চালকের ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একইভাবে, মালিকরা নির্ধারিত জমার বেশি আদায় করলে তাদেরও একই শাস্তি হওয়ার কথা। তবে এতদিন এই আইন কার্যকর করা যায়নি।
অবশ্য চালকরা দাবি করছেন, মালিকরা নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি জমা আদায় করেন বলেই তারা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেন।
সমাধান কী?
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক বলেন, "বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করা সম্ভব নয়, কারণ অটোরিকশাকে বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয়। মালিক ও চালকদের মধ্যে এক ধরনের অঘোষিত কার্টেল গড়ে উঠেছে। সমাধানের জন্য বড় কোনো কোম্পানির অধীনে সিএনজি পরিচালনা করা উচিত, যাতে নির্ধারিত নীতিমালার মধ্যে থেকে এই যান চলতে পারে।"
বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২৭ হাজার নিবন্ধিত অটোরিকশা রয়েছে, তবে বাস্তবে এর দাম বাজারের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। মূলত সীমিত সংখ্যক অটোরিকশার কারণে মালিকরা এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বসে আছেন এবং সরকারও এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে পারছে না।
সরকারের পিছু হটার ফলে পরিস্থিতি আপাতত শান্ত হলেও, এটি কতদিন স্থায়ী হবে, সেটাই দেখার বিষয়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!