কুমিল্লার গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে ত্রিপল বিছিয়ে শুকানো হচ্ছে রুপালি রঙের কিছু বস্তু। দূর থেকে ঝকঝকে দেখালেও কাছে গিয়ে বোঝা যায়, এগুলো মাছ কাটার পর ফেলে দেওয়া আঁশ। স্থানীয়দের অকল্পনীয় মনে হওয়া এসব আঁশ এখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
- মাছ কাটার কাজ থেকে ব্যবসায়ী মাহাবুব
মাছের আঁশ শুকানোর কাজের অগ্রদূত মো. মাহাবুব আলম। কুমিল্লা নগরের সংরাইশ এলাকার এই বাসিন্দা একসময় রাজগঞ্জ বাজারে মাছ কাটার কাজ করতেন। ১৩ বছর আগে এক ঢাকার ব্যবসায়ীর পরামর্শে তিনি আঁশ শুকানোর কাজ শুরু করেন। প্রথম দিনেই ১০ কেজি শুকনা আঁশ বিক্রি করে ৪০০ টাকা পান, যা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
এখন তিনি শুধু মাছ কাটেন না; নিজের ব্যবসা চালাচ্ছেন। মাসে গড়ে ৬০০ থেকে ১ হাজার কেজি মাছের আঁশ শুকিয়ে তা বিক্রি করেন। প্রতিকেজি আঁশ বিক্রি করছেন ৭০ টাকায়। মাহাবুব জানান, আঁশগুলো চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। সেখান থেকে এগুলো জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে প্রসাধনী, ওষুধ এবং ফুড সাপ্লিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- উচ্ছিষ্ট থেকে তেল ও খাদ্য তৈরি
অরণ্যপুর ও ঝাকুনিপাড়া এলাকাসহ আশপাশে মাছের আঁশ শুকানোর আরও কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। শুধু আঁশ নয়, মাছের নাড়িভুঁড়ি, লেজ ও পাখনা থেকে তেল তৈরি হচ্ছে, যা মাছ ও মুরগির খাদ্য তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই কাজের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা মাসিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন, সঙ্গে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা মালিক পক্ষের।
- বাজারে প্রতিযোগিতা, তবু লাভজনক
মাহাবুব বলেন, “আমি প্রথমে শুরু করেছিলাম, এখন প্রায় ১০ জন এই ব্যবসায় জড়িত। প্রতিযোগিতা বেড়েছে, কিন্তু মাস শেষে খরচ বাদেও ভালো আয় হয়।” রাজগঞ্জ, টমছমব্রিজ, কালির বাজারসহ বিভিন্ন বাজার থেকে মাছের উচ্ছিষ্ট সংগ্রহ করে এ কাজ চালানো হচ্ছে।
- মৎস্য কর্মকর্তার মতামত
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, “মাছের আঁশ শুকানোর উদ্যোগটি খুবই ভালো। চীনে রপ্তানি হওয়া এই আঁশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। যারা এই কাজে যুক্ত, তাঁদের সহায়তা দেওয়া হবে।”
ফেলনা জিনিসকে কাজে লাগিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এই উদ্যোগ কুমিল্লার তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!