কনটেন্ট ক্রিয়েশনের প্রতি বিশেষ কোনো আগ্রহই ছিল না নুসরাত ইসলামের।
এমনকি তিনি কখনো ভাবেননি যে, এই জগতে তিনি নাম লেখাবেন। তাঁর কথায়, "সত্যি বলতে, কনটেন্ট ক্রিয়েশন সম্পর্কে তেমন ধারণাই ছিল না। অন্যরা কীভাবে ভিডিও বানায়, সেটাও কখনো কাছ থেকে দেখিনি।"
কীভাবে শুরু হলো নুসরাতের ফুডভ্লগিং?
নুসরাতের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় তাঁর স্বামী। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই শুরু হয় এই যাত্রা। শুরুতে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও ধীরে ধীরে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেন। করোনাকালে একদিন এক ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করতেই ঘটে বিস্ময়কর এক ঘটনা। পরদিনই সেই ভিডিওতে প্রায় ১২ হাজার ভিউ! এত দ্রুত সাড়া পাওয়ায় অনুপ্রাণিত হন তিনি।
নুসরাত বলেন, "ভিডিওর এত ভিউ দেখে বুঝতে পারলাম, মানুষ আমাকে পছন্দ করছে। তখন ভাবলাম, যেহেতু ঘরে বসেই আছি, নতুন নতুন কনটেন্ট বানানোর চেষ্টা করাই ভালো।"
এভাবেই সংবাদ উপস্থাপক নুসরাত ইসলাম হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় ফুডভ্লগার "জলটান বিডি"। বর্তমানে তাঁর ফেসবুক পেজে ১৪ লাখেরও বেশি অনুসারী এবং ইউটিউব চ্যানেলে ৮৮ হাজারের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।

কীভাবে আলাদা নুসরাতের কনটেন্ট?
বাংলাদেশে ফুডভ্লগিংয়ে প্রতিযোগিতা এখন তুঙ্গে। হাজারো কনটেন্ট ক্রিয়েটরের মধ্যে নিজেকে আলাদা রাখার কৌশল কী? এ নিয়ে নুসরাত বলেন, "প্রতিযোগিতা থাকাটা ভালো, কারণ এটা কাজের প্রতি আরো অনুপ্রেরণা যোগায়। আমি সব সময় চেষ্টা করি, কনটেন্টের বিষয়বস্তু ও উপস্থাপনায় নতুনত্ব আনতে। দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে ভিডিওর শুরুতেই আকর্ষণীয় কিছু রাখি।"
শুধু খাবার নিয়ে কাজ নয়, এখন ভ্রমণবিষয়ক কনটেন্টও তৈরি করেন নুসরাত। তিনি নতুন নতুন দেশে গিয়ে ভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন দর্শকদের সঙ্গে। কিছুদিন আগে মালদ্বীপে পানির ওপর দিয়ে গাড়ি চালানোর একটি ভিডিও বানিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছিলেন।
স্পষ্টবাদিতা নুসরাতের শক্তি
নুসরাত মনে করেন, তাঁর স্পষ্টবাদিতাই তাঁকে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তিনি বলেন, "ফুড রিভিউয়ের সময় সব সময় রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। কোনো খাবারের দাম বেশি মনে হলে সেটার কারণ জানতে চাই। এই স্বচ্ছতা আর দায়িত্ববোধই দর্শকদের কাছে আমাকে গ্রহণযোগ্য করেছে। যদিও এজন্য কেউ কেউ আমাকে 'ফুড ভ্লগারদের মাফিয়া' বলে, তবে আমি এসব নিয়ে চিন্তা করি না। আমি বরং সত্যটাই তুলে ধরতে পছন্দ করি।"
নতুনদের জন্য পরামর্শ
যাঁরা কনটেন্ট ক্রিয়েশনে আসতে চান, তাঁদের জন্য নুসরাতের পরামর্শ, “যদি কেউ সফল হতে চায়, তাহলে নিজস্বতা বজায় রাখতে হবে। অন্যের কনটেন্ট নকল করে বেশি দিন টিকে থাকা সম্ভব নয়।”
সংবাদ উপস্থাপক থেকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর
ছোটবেলায় নুসরাতের স্বপ্ন ছিল শিক্ষকতা করা। স্কুলের শিক্ষকদের টিপটপ পোশাক ও অভিব্যক্তি দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হতেন। পরে এই স্বপ্ন পূরণও করেন। পড়াশোনা শেষে ঢাকার একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি সংবাদ উপস্থাপনায়ও যুক্ত ছিলেন।
তবে কনটেন্ট ক্রিয়েশনের প্রতি ভালোবাসা বাড়তে থাকায় তিনটি দায়িত্ব একসঙ্গে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ২০২২ সালের শেষের দিকে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দেন এবং পুরোপুরি কনটেন্ট ক্রিয়েশন ও সংবাদ উপস্থাপনায় মনোনিবেশ করেন।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
নুসরাতের কাজ শুধু দর্শকের ভালোবাসাই কুড়ায়নি, তিনি পেয়েছেন নানা পুরস্কার ও স্বীকৃতি। ২০২৩ সালে "দ্য মার্ভেল–বি ইউ ইনফ্লুয়েন্সার ফেস্ট অ্যান্ড অ্যাওয়ার্ডস"-এ সেরা ফুডভ্লগার পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক নারী দিবসে "নিবেদিতা ইকুয়ালাইজার ২০২২"-এ ফুডভ্লগিং ক্যাটাগরিতে বিশেষ স্বীকৃতি পান।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
নুসরাত বলেন, "অনেক জায়গা থেকে স্বীকৃতি পেয়েছি, যা দারুণ অনুপ্রেরণা দেয়। তবে সবচেয়ে বড় অর্জন হলো, মানুষ আমার ভিডিও দেখে এবং ভালোবাসে। আমি এই ভালোবাসাকে সঙ্গী করেই ভবিষ্যতে আরও ভালো কনটেন্ট তৈরি করতে চাই।"
"জলটান" নামের রহস্য
নুসরাতের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের নাম "জলটান বিডি"। এর পেছনে একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে। তিনি বলেন, "'জলটান' একটি হাঙ্গেরিয়ান শব্দ, যার অর্থ 'জীবন'। আমার কাছে জীবনের মানে হলো খাবার ও ভ্রমণ। তাই আমার কনটেন্টের মধ্যে সবসময় এই দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিই।"
সংবাদ উপস্থাপক থেকে জনপ্রিয় ফুডভ্লগার হয়ে ওঠার গল্প নুসরাত ইসলামের জন্য সহজ ছিল না। তবে স্বামী ও দর্শকদের অনুপ্রেরণা, কঠোর পরিশ্রম এবং স্পষ্টবাদিতা তাঁকে এনে দিয়েছে সফলতা। তাঁর গল্প অনেক তরুণ-তরুণীর জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণার উৎস।
আপনিও কি ফুড বা ট্রাভেল ভ্লগিং করতে চান? তাহলে শুরু করুন নিজের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে, ঠিক যেমনটা করেছেন নুসরাত ইসলাম!
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!