সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য-শিক্ষক দ্বন্দ্বে আলোচনার শীর্ষে। বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ থেকে শিক্ষকদের পদত্যাগ, উপাচার্য-শিক্ষকদের বাকবিতন্ডা, উপাচার্য-শিক্ষক-ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতির দ্বিমুখী আচরণ, কোষাধ্যক্ষ-উপাচার্যের পথরোধ, নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত, শিক্ষক সমিতির ক্লাস বর্জন, অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণায় স্থবির হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্বাভাবিক কার্যক্রম।
প্রায় ১৪ মাস পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারী গঠিত হয় শিক্ষক সমিতির নতুন কমিটি। এই কমিটি গঠনের পর তারা শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া বেশ কয়েকবার লিখিত ও মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন। তবে উপাচার্য তাদের দাবি-দাওয়া শুনতে আগ্রহী নন এমন অভিযোগে নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছে শিক্ষক সমিতি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে শিক্ষক ও উপাচার্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলমান। শিক্ষক সমিতির তাদের সকল কর্মসূচিতে বলছেন উপাচার্যের অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নিজের খেয়াল-খুশি মতো বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছেন।
প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগের হিড়িক:
এই পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ টি প্রসশনিক পদ থেকে মোট ১৯ শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগকারী শিক্ষকরা তাদের পদত্যাগপত্রে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেন।
সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়ে বাকবিতন্ডা:
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে জয় লাভ করার পর শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে সৌজন্য সাক্ষাতে যান শিক্ষকরা। সেখানে উপাচার্যের সাথে তাদের বাকবিতন্ডা হয়। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, চাকরিপ্রার্থীদের সাথে শিক্ষকদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনারে ফুল দেয়া নিয়ে বাকবিতন্ডা: ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, অনুষদের আগে কোটবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে উপাচার্য, উপ উপাচার্য, ট্রেজারারের উপস্থিতিতেই অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক কমিটির সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায় শিক্ষক সমিতি। এক পর্যায়ে অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে এর জন্য মাফ চাওয়ার দাবিও তুলেন শিক্ষকরা।
শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা ভণ্ডুল:
গত ৬ মার্চ ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষক সমিতি প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তুলে সেই নিয়োগ পরীক্ষা ভণ্ডুল করে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসশনিক ভবনের সামনে উপাচার্যকে 'ডাস্টবিন' বলে সম্বোধন করে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান।
সাত দফা দাবি উপস্থাপন:
গত ১২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সাত দফা দাবি উপস্থাপন করে। দাবিগুলো হলো- গত ১৯ ফেব্রুয়ারী উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষকদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলায় নেতৃত্ব দানকারী কর্মকর্তা জনাব মোঃ জাকির হোসেনের সাময়িক বহিষ্কারপূর্বক সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার ও জড়িত সকলের সর্বোচ্চ শান্তি নিশ্চিতকরণ এবং হামলায় মদদদানকারী প্রক্টর জনাব কাজী ওমর সিদ্দিকীর অপসারণ; ঢাকাস্থ গেস্টহাউজ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য অবমুক্ত করা; অধ্যাপক গ্রেড-১ ও অধ্যাপক গ্রেড-২ পদে পদোন্নতির জন্য আবেদনকৃত শিক্ষকদের অবিলম্বে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা; কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক বিন্নি বিভাগে বিভাগীয় প্রধান ও অনুষদসমূহের ডিন নিয়োগ এবং ইতোমধ্যে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যেসকল বিভাগে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের প্রত্যাহার করা; শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে আইন বহির্ভূত অবৈধ শর্ত আরোপ করে জ্যেষ্ঠতা ক্ষুণ্ণ করার মাধ্যমে যে সীমাহীন বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে দ্রুততম সময়ে সেসবের নিষ্পত্তিকরণ; ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত বিতর্কিত শিক্ষাছুটি নীতিমালা রহিত করে পূর্বের নীতিমালা বহাল রাখাসহ ৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করা।
দাবি আদায়ে ক্লাস বর্জন:
শিক্ষক সমিতি সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে প্রথমে ১৩ ও ১৪ মার্চ শ্রেণী কার্যক্রম থেকে বিরতি নেয়। পরবর্তীতে ১৯ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত আবার ক্লাস বর্জন করে। এরপর দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২১ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তীব্র তাপদাহের কথা চিন্তা করে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও শিক্ষক সমিতি সশরীরে ক্লাস নেয়ার ঘোষণা দেয়। সর্বশেষ ২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষকে কার্যালয়ে প্রবেশে বাঁধা দিলে সেখানে ছাত্রলীগ, চাকরিপ্রার্থী, শিক্ষক, উপাচার্যের ত্রিমুখী সংঘাত হয়। তখন শিক্ষক সমিতি সাত দফা দাবি বাদ দিয়ে এক দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা, প্রসশনিক কাজ বর্জন করে।
দাবি বাস্তবায়নে প্রসাশনের উদ্যোগ:
শিক্ষক সমিতির সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসন বিভিন্ন সময় চেয়েছিল এবং কমিটি করে দিয়েছিল। গত ২৪ এপ্রিল জরুরি সিন্ডিকেটে ১৯ ফেব্রুয়ারির ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিটি করা হয়। একই সিন্ডিকেট মিটিংয়ে গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ অধ্যাপক পদে উন্নতীকরণ সভা গত ১৬ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও শিক্ষক সমিতির দাবি দাওয়া নিয়ে আলাদা আলাদা দুটি কমিটি করায় এখন সেই বোর্ড থেকে সরে এসেছে প্রশাসন। এছাড়া ২৮ এপ্রিল গেস্ট হাউজ, শিক্ষা ছুটি, পদোন্নতি স্থায়ীকরণ বিষয়ে তিনটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রশাসন। এছাড়া সর্বশেষ গত ৭ মে শিক্ষক সমিতির দাবি ও উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় দুটি আলাদা কমিটি করা হয়েছে।
উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত, দপ্তরে তালা:
শিক্ষক সমিতির সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত ২৪ এপ্রিল প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয় শিক্ষক সমিতি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষক সমিতি ২৫ এপ্রিল উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের কার্যালয়ে তালা দেয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের দপ্তরে কোন তালা দেয়া হয়নি। এছাড়া গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি শিথিল থাকার কথা জানানো হয়।
কোষাধ্যক্ষকে গাড়িসহ অবরুদ্ধ:
গত ২৭ এপ্রিল গুচ্ছের 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষে আবারো তিন দপ্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি তালা লাগান। শিক্ষক সমিতির মতে, উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন পরিসেবা গ্রহণ করতে পারবে না। সেই সূত্রে তারা কোষাধ্যক্ষকে গাড়ি সহ মূল ফটকে প্রায় ৪ ঘন্টা আটকে রাখেন। এরপর কোষাধ্যক্ষ গাড়ি ত্যাগ করে চলে গেলেও শিক্ষক সমিতি রাত ১২ টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
উপাচার্যকে কার্যালয়ে প্রবেশে বাঁধা:
গত ২৭ এপ্রিল কোষাধ্যক্ষকে গাড়ি সহ পথরুদ্ধ করার পর ২৮ এপ্রিল শিক্ষক সমিতি উপাচার্যকে কার্যালয়ে প্রবেশে বাঁধা দেন। তখন ছাত্রলীগ, চাকরিপ্রার্থীদের দ্বারা শিক্ষকরা আঘাতপ্রাপ্ত হন।
সাত দফা থেকে এক দফা:
উপাচার্যকে কার্যালয়ে প্রবেশে বাঁধা দেয়ার ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও চাকরিপ্রার্থীদের দ্বারা শিক্ষকরা আঘাতপ্রাপ্ত হন। তখন শিক্ষক সমিতি তাদের ৭ দফা দাবি ত্যাগ করে উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগ চেয়ে এক দাবি ঘোষণা করে। সেই দাবিতে তারা নয়দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা:
গত ২৮ এপ্রিল ছাত্রলীগ ও চাকরিপ্রার্থী দ্বারা শিক্ষকদের আহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা সহ সকল প্রসশনিক কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর ৩০ এপ্রিল রাতে জরুরি সিন্ডিকেট শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন:
বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবিতে গত ১ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধন করে। এছাড়া তারা প্রতীকী ক্লাস সহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।
ক্ষতির মুখে শিক্ষার্থীরা:
শিক্ষক সমিতি ও উপাচার্যের দ্বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে সবেচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ১৩ মার্চ থেকে দফায় দফায় ক্লাস বর্জনের ফলে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ছুটির দিন বাদে প্রায় ২৮ দিন ধরে শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
এ ব্যপারে বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী তারতিলা হাসান বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সমস্যার কারণে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি দুর্বিপাকে পড়েছি। দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস ও পরীক্ষাগুলো বন্ধ থাকার কারণে আমাদের সেশনজটে পড়ার তীব্র সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে আমাদের মাস্টার্সের পরীক্ষা এতদিনে শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে আমরা ক্লাসই শেষ করতে পারি নাই। এছাড়াও এখন চাকরির জন্য আমাদের ওপর চাপ বিদ্যমান তার মধ্যে যদি সময়মত পরীক্ষাগুলো শেষ করতে না পারি তাহলে পরবর্তীতে আমাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে কারণ বয়স তো আর থেমে নেই। অতিদ্রুত যদি এই সংকট নিরুপণ না হয় তাহলে দিন দিন শিক্ষার্থীরা আরও বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। তাই শীঘ্রই এই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার অনুরোধ জানাচ্ছি প্রশাসনকে এবং পূর্বের ন্যায় ক্লাস ও পরীক্ষা চালু করার দাবী জানাই।'
ফার্মেসি বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় হলেও শিক্ষক সমিতি আর উপাচার্যের দ্বন্দ্বে সেই পাঠদান বন্ধ আছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য। এ জন্য ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা ঠিকই মাস শেষে বেতন নিচ্ছেন, পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। এদিকে আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি আমাদের জন্য এক মাসের বিরতি মানে চাকরির বাজার থেকে ১ বছর পিছিয়ে পড়া। ওনাদের স্বার্থের কারণে আমরা বলি হচ্ছি। জানি না এই সমস্যার অবসান কবে ঘটবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বক্তব্য:
এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, 'আমরা ১৯ ফেব্রুয়ারী উপাচার্য স্যারের সাথে দেখা করতে গেলে যে হামলার শিকার হই সেটির কোনো বিচার এখনো পাইনি৷ বিচার দূরে থাক উপাচার্য সেটির জন্য একটি তদন্ত কমিটি পর্যন্ত করেনি। তারপর আমরা নানাভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়েছি৷ ক্লাস বর্জন, অবস্থান কর্মসূচি আমরা করেছি। কিন্তু এর মাঝে উপাচার্য ২৮ এপ্রিল বহিরাগতদের নিয়ে উনিসহ শিক্ষকদের উপরে যে হামলা চালালেন সেটির পরে আমরা তার সাথে আর কাজ করতে পারবো না তাই আমরা উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছি।'
উচ্চশিক্ষার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা কি মনে করছেন?
এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম , কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিরসনের জন্য সিন্ডিকেট থেকে দুটি কমিটি করা হয়েছে। আশা করছি কমিটিগুলো আলোচনা করে খুব শীঘ্রই রিপোর্ট দিবেন।
তিনি আরো বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে শিক্ষক সমিতির যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে সেগুলো দেশজুড়ে ভাইরাল হয়েছে। দুই পক্ষেরই ভিডিও আছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে। শিক্ষক সমিতির শিক্ষকরা অপেক্ষাকৃত তরুণ। তাদের কয়েকজনের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছে। এখানে উপাচার্যও একজন শিক্ষক। তাদের উভয়পক্ষ থেকে শিষ্টাচার বহির্ভুত যে শব্দ চয়ন করেছে সেগুলো ঠিক না। সবার আগে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেই শিক্ষক সমিতি ও উপাচার্যকে নমনীয় হতে হবে। এছাড়া উপাচার্যের যেসব সীমাবদ্ধতা ছিল সেগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জামাল নাসের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। সেখানে চেইন অফ কমান্ড ঠিক থাকতে হবে। চেইন অফ কমান্ড ঠিক না থাকলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের জন্য দুই পক্ষকেই নমনীয় হতে হবে। আলোচনা করতে হবে। আলোচনা ছাড়া এই সমস্যা সমাধানের কোন পথ নেই।’
উপাচার্য-উপ উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষের বক্তব্য:
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, আমি এক মুহূর্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখতে চাই না। শিক্ষক সমিতিই প্রথমে ক্লাস বর্জন করেছে। পরবর্তীতে সিন্ডিকেট উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। শিক্ষক সমিতির দাবি-দাওয়া, উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করে দেয়া হয়েছে। তারা বসুক, আলোচনা করুক। কমিটি আমাদের যা সুপারিশ করবে আমরা তা মেনে নিব।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ' বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট থেকে দুটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটির সুপারিশ মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এই বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছে সেটা পুশিয়ে দেয়ার জন্য রিকভারি প্লান তৈরি করা হবে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দেশের মান উন্নয়নে সহায়ক এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশৃঙ্খলা কোনভাবেই কাম্য নয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমনি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবন হুমকির মুখে পড়ে। শিক্ষক সমিতি যেসব দাবি-দাওয়া পেশ করেছিল সেসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় উপাচার্য কিছ পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে দুটি উচ্চতর কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে শিক্ষক সমিতির দাবি-দাওয়া, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চলবে। আশা করি সমাধান আসবে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কখনো প্রসাশনের প্রতিপক্ষ হতে পারে না। তারাও প্রসাশনের অংশ। আমাদের সকলকে মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা দানের পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ করতে হবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!