বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদ থেকে অনেকেই পদত্যাগ করেছেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও এর ব্যতিক্রম নয়। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান, হল প্রভোস্ট এবং প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক-প্রশাসনিক এবং শৃঙ্খলার কাজে বিভিন্ন সমস্যার দেখা দিয়েছে।
এছাড়া চলতি বছরের ৪ জুলাই থেকেই কোষাধ্যক্ষের পদে থাকা অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান মেয়াদ শেষ করার পর শূন্যই আছে পদটি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক বিভিন্ন কাজেও ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে বলে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক- প্রশাসনিক এবং আর্থিক কার্যক্রম চালাতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের সাক্ষর দরকার হয়, নতুন মাসে শিক্ষক, কর্মর্কতা- কর্মচারীদের বেতন প্রদানের জন্য উপাচার্য অথবা কোষাধ্যক্ষের সাক্ষর প্রয়োজন। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান মেয়াদ শেষ করে চলে যাওয়ার পর নতুন কোষাধ্যক্ষ না থাকায় আর্থিক কাজগুলোতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া কোষাধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আর্থিক কাজগুলো চালাতে পারলেও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নানা নাটকীয়তা শেষে অবশেষে ১৯ আগস্ট পদত্যাগ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। এছাড়া শিক্ষার দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির। পদত্যাগের আগে ১৪ দিন অফিস না করায় মোট ১৩ টি পরীক্ষার ফলাফল জমে গিয়েছিল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে। তবে পদত্যাগের আগে সেগুলোতে স্বাক্ষর করে যাওয়ার পর আরো চারটি বিভাগের পরীক্ষার ফলাফল জমা হয়েছে দপ্তরে। এই মুহূর্তে এই ফলাফল গুলোকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার কেউ নেই। এছাড়া প্রশ্ন মডারেশন, গেস্ট টিচার নিয়োগ সহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছে দপ্তরটি।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নুরুল করিম চৌধুরী বলেন, সর্বশেষ বিভিন্ন বিভাগের ৪টির মত ফলাফল সাক্ষরের জন্য আটকে আছে। তবে, প্রশাসন না থাকায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যেমন, প্রশ্ন মডারেশন, গেস্ট টিচার নিয়োগসহ বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি আবাসিক হলের মধ্যে ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল (বিজয় ২৪), মেয়েদের শেখ হাসিনা হল( বিপ্লবী সুনীতি-শান্তি হল) এবং নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল প্রভোস্ট শূন্য। এছাড়া সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মইনের সাথে দ্বন্দ্বে বিভিন্ন হলের হাউজ টিউটররাও পদত্যাগ করেছিলেন। ফলে হলগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হলেও সমাধানের কাউকে পাচ্ছেন না।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের অবসিক শিক্ষার্থী তানজিনা আক্তার বলেন, 'হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আছে যেগুলো সমাধানের জন্য প্রভোস্ট খুব প্রয়োজন। হলে অনেক সিট ফাঁকা আছে কিন্তু প্রভোস্ট না থাকার কারণে এ সিটগুলো সমবন্টন হচ্ছে না। তার ওপরে বিভিন্ন ধরনের ইমার্জেন্সি সমস্যা হলে বা সার্টিফিকেট তুলা নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। তাছাড়া হলের মিলের ওপর আগে যেরকম নজরদারি ছিল এখন সেরকম হচ্ছে না। লাইট,পাখা এগুলোর সমস্যাতেও ঠিক সময়ে সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না।
হলের ব্যাপারে যে জবাবদিহিতার জায়গা রয়েছে সেটা এখন ফাঁকা। আমরা প্রতিনিয়ত এখানে থাকছি এবং অনেক সমস্যাও ফেইস করতে হচ্ছে। এ মুহূর্তে আমরা এমন একজন প্রভোস্ট চাই যিনি কাজে কোনো প্রকার অবহেলা না করে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করবে।'
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল অর্থাৎ 'বিজয় ২৪' হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ওবাদুল্লাহ হক বলেন, 'দেশের এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে হলে যদি কোন প্রশাসন না থাকে তাহলে যে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী থাকবে? ক্যাম্পাস যেহেতু খোলা আছে সেহেতু হলের যেই সব প্রশাসনিক কার্যক্রম আছে তাও স্থবির হয়ে আছে।
কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা কার কাছে সমাধানের জন্য যাব। ক্যাম্পাসে প্রক্টরিয়াল বডি নেই, নেই ভিসি কিংবা প্রো- ভিসি, তার মধ্যে আবার আমাদের হলের প্রভোস্টও নেই। আমাদের নিরাপত্তা এখন কে দিবে?'
এছাড়াও গত ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী পুরো প্রক্টরিয়াল বডি সহ পদত্যাগ করে । বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্বে নেই কেউ। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম প্রশাসনে কেউ না থাকায়। তবে, গত ২৯ তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামীকাল মিটিং হবে এবং ডিন কাউন্সিল ও সিনিয়র অধ্যাপকদের থেকে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। আশা করি একটি সমাধানে পৌঁছানো যাবে।’
ছাত্র- জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী সরকারের পতনের পর আগামীকাল নতুন মাস শুরু হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন সহ অন্যান্য আর্থিক কাজ কিভাবে চলবে কীভাবে?― এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, 'শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে আমরা আগামীকাল (০১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন এবং অধ্যাপকদের নিয়ে আলোচনায় বসবো। এরপর একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সেই প্রেক্ষিতেই আমরা নিয়মিত কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যাবো।'
তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে এবং একসাথে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য শূন্য। তাই মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ নিতে একটু সময় লাগছে। তবে, আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই একজন যোগ্য উপাচার্য পাবো আমরা।'
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!