মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারানোর কথা জানান বাহার উদ্দিন (৩৯)। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমার সব শেষ অইয়্যা গেছে। আমি নিঃস্ব অইয়্যা গেছি। জমিজমা-বাড়িঘর বেইচ্চা পোলারে বিদেশ পাঠাইছিলাম। দালালে আমার সোনার সংসার তছনছ করে দিছে।” বাহার উদ্দিনের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের ভাটিচর নওপাড়া গ্রামে।
জানা গেছে, জীবিকার সন্ধানে উন্নত দেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে অনেক বাংলাদেশি মানবপাচারকারী দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। এর মধ্যে বাহার উদ্দিনের ছেলে মিজান মিয়া (২৫) একটি ঘটনা। ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ মানবপাচারকারী চক্রের দুই সদস্য সাহাব উদ্দিন (৪০) ও তার স্ত্রী রূপা আক্তার (২২) গ্রেপ্তার করেছে।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) পুলিশ তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করে। সাহাব উদ্দিন ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামের বাসিন্দা। বাহার উদ্দিনের দায়ের করা মামলায় সাহাব উদ্দিন ও তার স্ত্রীসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী বাহার উদ্দিন জানান, মিজান সৌদি আরবে থাকার সময় সাহাব উদ্দিনের এক শ্যালকের মাধ্যমে পরিচিত হয়। এরপর তাকে লিবিয়ায় চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। নিরীহ মিজান এবং তার পরিবার বিশ্বাস করে ১২ লাখ টাকা খরচ করে তাকে লিবিয়ায় পাঠান। সেখানে গিয়ে মিজান অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন।
মিজানের পরিবারের অভিযোগ, লিবিয়ায় নির্যাতনের পর সাহাব উদ্দিন আবারও ১৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মোট ২৮ লাখ টাকা দেওয়ার পরেও মিজানের ওপর নির্যাতন চলতে থাকে। একপর্যায়ে বাহার উদ্দিন থানায় অভিযোগ করতে বাধ্য হন।
মিজানের পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এবং সরকারকে তার ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানান।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুর রহমান জানান, "অভিযোগের ভিত্তিতে মানবপাচার আইনে মামলা রুজু করে দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।"
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!