টানা সাড়ে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় সূচিত হয়েছিল। সেই নাটকীয় দিনটির ঠিক এক বছর পর আজও স্মরণ করা হচ্ছে ইতিহাসের এই রূপান্তর।
গত বছরের এই দিনে, দুপুর আড়াইটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা রাজধানীর গণভবন ত্যাগ করলে বিজয়ের উল্লাসে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ‘স্বৈরাচার পতনের’ সংবাদ, আর সেই আনন্দের ঢেউ আছড়ে পড়ে রাজধানীর প্রতিটি সড়কে।
গণভবনের ফটক ভেঙে প্রবেশ করে হাজারো মানুষ
গণভবন ত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজার হাজার জনতা গণভবনের ফটক ভেঙে কিংবা দেয়াল টপকে প্রবেশ করে অভিজাত এ সরকারি বাসভবনে। দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, কৌতূহল এবং আবেগ একত্র হয়ে মুহূর্তে যেন বয়ে যায় সেই প্রাসাদোপম বাসভবনের প্রতিটি করিডোরে।
একটি দৃশ্যপট ছিল আবেগঘন—গণভবনের মাঠে অনেককে দেখা যায় দুই হাত তুলে সেজদাহ করতে, কেউবা স্লোগানে মুখর ছিল, কেউবা আবার মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করছিল সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
কিছু মানুষ নেন ব্যবহৃত জিনিসপত্র, ওঠে সমালোচনার ঝড়
যদিও প্রকৃত আন্দোলনকারীরা তখনো রাজপথে বিজয় উদযাপনেই ব্যস্ত ছিলেন, তবুও গণভবনের ভেতরে থাকা সাধারণ কিছু মানুষ কৌতূহলের বশে এবং অতিউৎসাহে সেখান থেকে নানা জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। ওই দিন গণভবনের সোফা, টেলিভিশন, গৃহস্থালি সামগ্রী এমনকি শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত কিছু সামগ্রীও বেরিয়ে আসে জনতার হাতে।
ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, পরে গণমাধ্যমেও ‘লুট’ উল্লেখ করে প্রকাশ হয় একাধিক প্রতিবেদন। তবে যারা এসব নিয়ে যান, তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা সেসব সংগ্রহ করেছেন “স্বৈরাচার পতনের স্মারক” হিসেবে।
সমালোচনায় বিশ্লেষকরা
এমন পরিস্থিতি ঘিরে দেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রস্থলে থাকা এক নেত্রীর পতন ও সেই সঙ্গে জনতার গণভবনে প্রবেশ নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। তবে কোনো রাষ্ট্রীয় সম্পদ বা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নেওয়া কখনোই সভ্য আচরণ হতে পারে না।
তারা আরও বলেন, এটি ছিল জনগণের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, তবে সেই আবেগ যেন ভাঙচুর বা অপব্যবহারে রূপ না নেয়, সে বিষয়ে সকলের সচেতন থাকা জরুরি।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!