সম্প্রতি ঢাকাসহ সারাদেশে হঠাৎ করেই চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। এতে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাজধানীর ব্যস্ত সড়ক থেকে শুরু করে অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোতেও এসব অপরাধ ঘটছে, যা নগরবাসীকে নিরাপত্তাহীনতার গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে।
অপরাধের হটস্পট: মোহাম্মদপুর শীর্ষে, নতুন করে যুক্ত উত্তরা ও মিরপুর
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর মোহাম্মদপুর বর্তমানে অপরাধের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি উত্তরা, মিরপুর এবং খিলগাঁও এলাকাও নতুন করে অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দিনের বেলা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেছে।
মোহাম্মদপুরে অপরাধের সাম্প্রতিক নজির:
নেসলে কোম্পানির গাড়ি থেকে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ছিনতাই।
অস্ত্রের মুখে নারী শিক্ষার্থীর ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া।
কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে একাধিক হত্যাকাণ্ড।
জেনেভা ক্যাম্পে গোলাগুলি ও ‘কবজি কাটা’ আনোয়ার হত্যাকাণ্ড।
এলাকায় গণছিনতাই এখন নিত্যদিনের ঘটনা।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব অভিযান সত্ত্বেও অপরাধ কমছে না।
উত্তরায় দম্পতির ওপর প্রকাশ্যে হামলা, প্রশ্নের মুখে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় এক দম্পতির ওপর প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে হামলার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং নাগরিকরা প্রতিবাদ করলে তাদের জীবনহানির শিকার হতে হচ্ছে। এই ঘটনায় জননিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মিরপুরে এক রাতে ছয়টি দোকান ও দুটি বাসায় ডাকাতি
গতকাল শুক্রবার মিরপুর ১০ নম্বর এ ব্লকের ২০ নম্বর লাইনে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল এক রাতে ছয়টি দোকান ও দুটি বাসায় হানা দিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ভোর রাত ৪টা ২০ মিনিটে একটি প্রাইভেটকার থেকে তিনজন বের হয়ে দোকানের তালা ভেঙে ডাকাতি করে। পরে আবার ফিরে এসে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায়। একই কৌশলে পাশের দোকান ও বাসায়ও হামলা চালানো হয়।
পল্লবীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৫ জন গ্রেপ্তার
গত বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ই ব্লকের ৫ নম্বর রোডে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র, ছুরি, রামদা ও চারটি ককটেল উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন:
সোহেল হাওলাদার (২৯)
মো. রাজা (৩২)
শাহাদাৎ হোসেন (৩৬)
আবদুল মান্নান (২৯)
মো. সুজন (৩০)
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপের দাবি
রাজধানীর অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোর বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হলেও অপরাধের লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনা, জামিনে বেরিয়ে আসা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধ বাড়িয়ে তুলছে। নাগরিকরা দাবি জানাচ্ছেন, কঠোর নজরদারি ও বিশেষ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অপরাধ নির্মূল করা হোক।
সাধারণ নাগরিকদের জন্য সতর্কতা:
রাস্তায় চলাফেরার সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন।
রাতের বেলা নির্জন রাস্তা এড়িয়ে চলুন।
অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে সাহায্য নিতে সতর্ক থাকুন।
যেকোনো সন্দেহজনক কিছু দেখলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা আরও কঠোর হবে এবং অপরাধ দমনে বিশেষ টহল কার্যক্রম বাড়ানো হবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!