জুলাই-আগস্ট মাসে গণ-অভ্যুত্থানের সময় লুট হওয়া পুলিশের প্রায় দেড় হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এবং আড়াই লাখের বেশি গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। এসব অস্ত্র অপরাধীদের হাতে চলে যাওয়ার ফলে তা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা জননিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জে এক তরুণীকে হত্যার ঘটনায় লুট হওয়া পিস্তল ব্যবহারের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। পুলিশের ধারণা, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কিছু ঘটনায় এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের ব্যবহার
গত শনিবার মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর এলাকায় শাহিদা আক্তার নামের এক তরুণীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তদন্তে জানা যায়, হত্যায় ব্যবহার করা পিস্তলটি ঢাকার ওয়ারী থানা থেকে লুট করা হয়েছিল। এই ঘটনায় অভিযুক্ত তৌহিদ শেখ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এবং পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়েছে।
- সারা দেশে যৌথ অভিযান
লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে। পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৫৬টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো ১ হাজার ৪১৯টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২ লাখ ৬৩ হাজার ১৫৩টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
- কারাগার থেকে পালানো আসামি ও অপরাধের আশঙ্কা
গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে ২ হাজার ২০০ আসামি পালায়, যাদের মধ্যে ৭০০ জন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর মধ্যে বেশ কিছু দাগি সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থী রয়েছে। লুট হওয়া অস্ত্রের বেশিরভাগ তাদের হাতে চলে যাওয়ার বিষয়টি পুলিশ এবং জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
- বিশেষজ্ঞদের মতামত
ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেছেন, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হলে জননিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি দেখা দেবে। তিনি যৌথ অভিযানের কার্যক্রম আরও জোরদার করার পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক তল্লাশি এবং সন্দেহভাজনদের নজরদারির আওতায় আনার পরামর্শ দেন।
- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের সতর্কতা
পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. আকরাম হোসেন জানিয়েছেন, লুট হওয়া অস্ত্রের বেশিরভাগ উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকি অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ কমিটি কাজ করছে। জেলপলাতক আসামিদের আটক করতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।
লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা না গেলে ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলার বড় ধরনের অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!