মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে সৌদি আরবের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রয়োজনীয়তা আর থাকছে না। সিরিয়া ও লেবাননে তেহরানের প্রভাব কমে যাওয়ার পর ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে চাপ ছিল, তার যৌক্তিকতাও অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী লবিগুলো সৌদি আরবের ওপর চাপ সৃষ্টি করছিল, যাতে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এতে ইসরায়েল ও পশ্চিমা শক্তিগুলো লাভবান হতো, কিন্তু সৌদি আরবের কূটনৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ত।
সৌদি নীতিতে পরিবর্তন
সৌদি আরব সম্প্রতি বেশ কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। বিশেষ করে গাজার বর্তমান সংকট নিয়ে দেশটির স্পষ্ট অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তারা আরব স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি সৌদি আরবের জন্য কৌশলগত সুবিধা এনে দিয়েছে। ইরানের প্রভাব হ্রাসের ফলে অঞ্চলে নেতৃত্বদানের সুযোগ পেয়েছে সৌদি আরব। সিরিয়া এতদিন ইরানের অর্ধচন্দ্র নীতির কেন্দ্র ছিল, যা সৌদি আরবের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সৌদি আরব নিজেই আরব বিশ্বের কেন্দ্র হয়ে উঠছে।
সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক কি প্রয়োজন?
যখন সৌদি আরব সিরিয়ায় ইরানের প্রভাব কমিয়ে দিয়ে আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য নিজেদের পক্ষে নিয়ে এসেছে, তখন দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন সৌদি আরবের আঞ্চলিক নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
সৌদি আরবের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অর্থ হবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে আপস করা। অথচ ফিলিস্তিনি সংকটকে উপেক্ষা করা আরব বিশ্বের রাজনৈতিক বাস্তবতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ইতিহাস বলছে, মিসরের গামাল আবদেল নাসের, ইরাকের সাদ্দাম হোসেন এমনকি ইরানও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজেদের আঞ্চলিক অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।
আরব শান্তি উদ্যোগের গুরুত্ব
এ পরিস্থিতিতে সৌদি আরব ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগকে সামনে আনতে পারে, যা ফিলিস্তিনি সংকট সমাধানের জন্য একটি সম্ভাব্য কৌশল। যদিও এটি ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে না, তবুও এটি কূটনৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনি সংকটের ন্যায্য সমাধানের জন্য সৌদি আরব যদি সক্রিয় ভূমিকা নেয়, তাহলে এটি পুরো আরব বিশ্বের কাছে তাদের সম্মানজনক অবস্থান গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত বাস্তবতা
এদিকে, সৌদি আরবের নীতিগত পরিবর্তনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও বিবেচ্য। বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একপাক্ষিক নীতিগুলো শুধু সৌদি আরবই নয়, বরং ইউরোপ, কানাডা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোও প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিশ্ব রাজনীতির নতুন মেরুকরণে চীনের উত্থানকেও উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। বেইজিং ২০৪৯ সালের মধ্যে বৈশ্বিক নেতৃত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগোচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সৌদি আরব কেন ক্রমশ দুর্বল হতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের ভবিষ্যৎ জুড়ে দেবে?
নতুন কৌশলের প্রয়োজন
বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরবের এখন এমন কৌশল গ্রহণ করা উচিত, যা তাদের আঞ্চলিক নেতৃত্বকে সুসংহত করবে এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে জোরালো অবস্থান নিশ্চিত করবে। ইসরায়েলের সঙ্গে আপস না করে ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোই হতে পারে সৌদি কৌশলের নতুন দিগন্ত।
(সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর থেকে অনূদিত ও সংক্ষেপিত)
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!