‘যুদ্ধে পাঠানো হবে, জানতাম না... এখন বেঁচে থাকাটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’—এভাবেই ভয় আর অনিশ্চয়তার কথা জানান ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধরত এক বাংলাদেশি তরুণ।
দালালের প্রতিশ্রুতি ছিল ইউরোপে ভালো চাকরির। কিন্তু সেই স্বপ্নের পথ হয়ে উঠল রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্র। উত্তর মেসিডোনিয়ায় চাকরির কথা বলে দালাল তাঁকে পাঠান রাশিয়ায়। চাকরি হারানোর পর দেশে ফেরার চেষ্টা করতেই ‘ধরা পড়েন’ রুশ দালালের হাতে। কাগজপত্র কাড়ার পর চুক্তিনামায় স্বাক্ষর, এরপর বুঝতে পারেন—তাঁকে ‘বিক্রি’ করে দেওয়া হয়েছে রুশ সেনাবাহিনীতে।
এই করুণ অভিজ্ঞতা শুধু একজনের নয়। প্রথম আলো’র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে তিন তরুণের বাস্তব কাহিনি, যাঁরা এখন ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াল বাস্তবতায় বন্দুক হাতে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন।
প্রাণ গেল আকরামের, নিখোঁজ ইয়াসিন
২২ বছরের মোহাম্মদ আকরাম মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের তরুণ। কয়েক মাস আগে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ হারান তিনি। এক সহযোদ্ধা ফোন করে তাঁর মৃত্যুসংবাদ দেয় পরিবারকে। একই পথের যাত্রী ছিলেন ময়মনসিংহের ইয়াসিন মিয়াও। গত ২৭ মার্চ ইউক্রেনের মাটিতে প্রাণ দেন তিনিও।
প্রলোভনের ফাঁদে যুদ্ধে ঠেলে দেওয়া
তরুণদের ভাষ্য, সবাই দালালের মাধ্যমে রাশিয়ায় যান, কাজ পান একটি প্রতিষ্ঠানে। কয়েক মাসের মাথায় চাকরি চলে গেলে ফেরার চেষ্টা করেন। বিমানবন্দরে রুশ দালালেরা ‘ভিসা নবায়নের’ কথা বলে পাসপোর্ট নিয়ে গিয়ে চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করান। এরপর সরাসরি প্রশিক্ষণ শিবির, হাতে অস্ত্র, তারপর যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো।
“গাছ কাটার কথা ছিল, হঠাৎ বন্দুক হাতে পাই,” বলেন এক তরুণ।
“শুধু ৫ দিনের প্রশিক্ষণেই পাঠানো হয় ইউক্রেন সীমান্তে। প্রথম অভিযানে ফেরে ৬ জন, বাকিরা নিখোঁজ,” জানালেন আরেকজন।
এখন কী অবস্থা?
গাজীপুরের অয়ন মণ্ডল এখন ইউক্রেনের এক সামরিক ঘাঁটিতে। লুকিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস রেকর্ডে বলেন, “খুব বিপদের মধ্যে আছি। কথা বলাও নিষেধ। এক সেকেন্ডেও কী হয় বলা যায় না।”
ময়মনসিংহের আফজাল হোসেন বললেন, “প্রথমে বলা হয়েছিল ৩ লাখ টাকার চাকরি, এখন গোলাবারুদ বয়ে বেড়াচ্ছি। কোনো বেতন পাইনি।”
“আমাদের বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে!”
তরুণদের কথায় উঠে এসেছে মানবপাচার ও প্রতারণার এক ভয়ংকর চিত্র। ভিন্ন দেশের যুদ্ধে প্রাণ বিলিয়ে দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের যুবকদের। দালালদের লোভের শিকার হয়ে কেউ জীবন হারাচ্ছেন, কেউ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে শুধুই বাঁচার প্রার্থনা করছেন।
সরকারের কাছে আকুতি
তিনজনই তাঁদের বক্তব্যে বারবার সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন—“আমাদের যেন দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। নতুন কাউকে যেন এমন ফাঁদে পড়তে না হয়।”
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!