ঢাকা, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫:
আজ সকাল ৯টা ৫ মিনিট। ঢাকার চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানার সামনে হুইসেল বাজিয়ে থামে নীল রঙের একটি বড় প্রিজন ভ্যান। ভ্যান থেকে নামেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। পুলিশের নারী সদস্যরা তাঁকে হাজতখানার ভেতরে নিয়ে যান।
হাজতখানায় এরই মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিমসহ আরও বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তি। ৩০ মিনিট পর পুলিশ প্রথমে হাজি সেলিমকে বের করে আনে। তাঁর পরনে ছিল ঢিলেঢালা সাদা পাঞ্জাবি। সাংবাদিকদের দেখে তিনি হাসিমুখে প্রতিক্রিয়া জানান।
এরপর একে একে আদালতে হাজির করা হয় সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে।
হাজি সেলিমের জামিন নাকচ
কাঠগড়ায় হাজি সেলিম চিৎকার করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে পুলিশ যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে। জামিনের আবেদন জানিয়ে হাজি সেলিমের আইনজীবী আদালতে বলেন, “আমার মক্কেল অসুস্থ। কাশিমপুর কারাগারে তিনি প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পাচ্ছেন না, যা তাঁর প্রাপ্য। কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর কোনো কথা শুনছে না।”
তবে প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত হাজি সেলিমের জামিন নাকচ করেন এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কাঠগড়ায় চিঠি লিখলেন দীপু মনি
সকাল ১০টায় আদালতে রিমান্ড শুনানি চলাকালীন দেখা যায়, কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি টিস্যু পেপারের ওপর কিছু লিখছেন। তাঁর বাঁ হাতে ছিল কয়েকটি টিস্যু পেপার, আর ডান হাতে একটি কলম। পাঁচ মিনিট ধরে লেখার পর তিনি চিঠিটি একজন আইনজীবীর পোশাক পরা ব্যক্তির হাতে তুলে দেন। ওই ব্যক্তি চিঠির ছবি তুলে তা ভাঁজ করে নিজের কাছে রাখেন।
এ ঘটনা নিয়ে আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক বলেন, “আদালতে একজন আসামি অনুমতি ছাড়া চিঠি লিখতে বা হস্তান্তর করতে পারেন না। বিষয়টি যদি নজরে আসত, আমি অবশ্যই আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতাম।”
দীপু মনির আইনজীবী গাজী ফয়সাল ইসলাম বলেন, “আমার মক্কেল চিঠি লিখেছেন কি না, তা আমার জানা নেই। শুনানিতে ব্যস্ত থাকায় আমি বিষয়টি খেয়াল করতে পারিনি।”
বিমর্ষ আনিসুল, চুপচাপ সালমান এফ রহমান
আদালতে আনিসুল হককে বিমর্ষ মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সালমান এফ রহমান, তবে তিনি কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। এদিকে সাবেক দুই আইজিপি শহীদুল হক ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন।
রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুও উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁরা নিজেদের মধ্যে কোনো কথা বলেননি।
রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ
আদালত শুনানি শেষে আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেননসহ অন্যদের দুটি হত্যা মামলায় রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতের আজকের কার্যক্রমে আলোচিত ছিল কাঠগড়ায় দীপু মনির চিঠি লেখা এবং হাজি সেলিমের জামিন আবেদনের বিষয়টি। জনাকীর্ণ আদালতে এই ঘটনাগুলো উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!