বাংলাদেশ বর্তমানে সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন ও জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা যেন আরও বাড়ছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার এবং সেনাবাহিনী নিয়ে যেসব মন্তব্য এবং মতামত প্রকাশিত হচ্ছে, তা দেশে অস্থিরতার সৃষ্টি করছে।
গত জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মতবিনিময়ের পথ খুলে দিয়েছে। বর্তমান মুক্ত পরিবেশে, সত্য, অসত্য, বিভ্রান্তিকর বা উদ্দেশ্যমূলক যেকোনো মতামত প্রকাশের সুযোগ রয়েছে, যা কখনো কখনো অস্থিরতার সৃষ্টি করে। এর মধ্যে, নতুন গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ফেসবুক মন্তব্য দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উত্তেজনা তৈরি করেছে।
১১ মার্চ সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে হাসনাত আবদুল্লাহ দাবি করেছেন, গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের ‘রিফাইন্ড’ অংশকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের জন্য ভারত পরিকল্পনা করছে। তার মতে, এই প্রক্রিয়া আসন সমঝোতার বিনিময়ে তাদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। এমন মন্তব্যের পর, ২১ মার্চ তিনি আবারও ফেসবুকে লিখেন যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই, তবে তিনি এই প্রক্রিয়া বাতিল করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যের পর, এনসিপি দল তার পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে, যেখানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গটি খারিজ করা হয়। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের নিন্দা জানাই, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।’
এদিকে, হাসনাতের দাবি নিয়ে সেনাবাহিনী তাদের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে বৈঠকটি ছিল স্বেচ্ছায় এবং কোনো প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। সেনাবাহিনী হাসনাতের অভিযোগকে ‘অপরিপক্ব গল্প’ বলে অভিহিত করেছে। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বৈঠকটি নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হলেও সেনাবাহিনী তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।
এ ঘটনায় এনসিপি দলের ভেতরেও অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। দলের মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী হাসনাতের মন্তব্যকে ‘শিষ্টাচারবর্জিত’ বলে মন্তব্য করেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, হাসনাতের এই মন্তব্যের ফলে দলের মধ্যে বিভাজন এবং সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে।
অতীতে গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে ছাত্রদের নেতৃত্বে, এবং বর্তমানে সেই ছাত্র নেতারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক দল পরিচালনার জন্য যে ধরনের সতর্কতা ও শৃঙ্খলা প্রয়োজন, তা হয়তো তারা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি। হাসনাত এবং তার দল যখন ফেসবুকে এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য করেন, তখন দলের সমর্থকদের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং হাসনাত আবদুল্লাহর মন্তব্যের পর, জনমনে প্রশ্ন উঠেছে— এটি কি নিছক রাজনৈতিক অপরিপক্বতা, নাকি এর পেছনে কোনো পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রয়েছে? এনসিপি দলের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হবে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা এবং দলের মধ্যে বিভক্তি দূর করা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!