মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারী কর্মী পাঠানো বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশ হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিদেশে নারী কর্মী গিয়েছিলেন ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। ২০২৩ সালে তা ২৮ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ১০৮ জনে। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা আরও ২০ শতাংশ কমে হয়েছে ৬১ হাজার ১৫৮ জন।
নির্যাতন ও নিপীড়নের অভিজ্ঞতা:
মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া বেশিরভাগ নারীর অভিযোগ নির্যাতন, বেতন না পাওয়া, কিংবা কম বেতন দেওয়া। মানিকগঞ্জের ফিরোজা দুই বছর সৌদি আরবে কাজ করে গত অক্টোবরে দেশে ফিরে আসেন। তিনি জানান, প্রথমে বেতন নিয়মিত পেলেও পরে টানা ১১ মাস বেতন বন্ধ থাকে। খাওয়ার সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি।
একই অভিজ্ঞতা ফরিদপুরের শাহিদা বেগমেরও। তিনি দুই বছর তিন মাস সৌদি আরবে কাজ করেন। বেতন কম দেওয়া, খাবার নিয়মিত না দেওয়া এবং শারীরিক নির্যাতন—এসব তার জীবনে দুঃসহ স্মৃতি হয়ে রয়েছে। এমনকি দেশে ফেরার টিকিটের জন্য বেতন থেকেও টাকা কেটে নেওয়া হয়। এখন অর্থকষ্টে তিনি নিজের চিকিৎসা করাতেও অপারগ।
নারী কর্মী পাঠানোর হার কমার কারণ:
নারী কর্মী পাঠানোর সংখ্যা কমার কারণ সম্পর্কে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী জানান, প্রক্রিয়াগত সময় বেড়ে যাওয়া এবং নেতিবাচক অভিজ্ঞতার প্রচারণার কারণে নারীদের বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও কর্মীর চাহিদা কমেছে। নিয়োগকর্তারা এখন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিচ্ছেন।
অভিযোগ ও বাস্তবতা:
বিদেশ থেকে ফিরে আসা নারী কর্মীদের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, তাদের অধিকাংশই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, খাবার ও বেতন সংক্রান্ত সমস্যা, এবং দীর্ঘ সময় কাজ করানোর অভিযোগ তুলেছেন। অনেক সময় মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।
ওকাপের চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম বলেন, গৃহকর্মী ছাড়া অন্য কোনো খাতে নারীদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি হয়নি। বাসায় কাজ করতে গিয়ে নারীরা যে নিয়মিত নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, তা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মিথ্যে প্রলোভনে নারীরা বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে কর্মসংস্থানের সংকট:
বিএমইটির তথ্য অনুসারে, গত বছর নারী কর্মীরা ৫৬টি দেশে গিয়েছেন। এর মধ্যে ৩০টি দেশে গেছেন ১০ জনেরও কম নারী কর্মী। সৌদি আরব, জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাজ্যে গেছেন ১ হাজারের বেশি নারী। তবে সৌদি আরবেই গেছেন মোট নারী কর্মীর ৬৬ শতাংশ, যা সংখ্যায় ৪০ হাজারের বেশি।
নারী কর্মীদের বিদেশে পাঠানোর হার কমে যাওয়ায় নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে এই খাত। প্রয়োজন পরিকল্পিত কর্মসংস্থান ও সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, যাতে নারীরা নিরাপদে বিদেশে কাজ করতে পারেন এবং তাদের অধিকার রক্ষা হয়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!