চাঁদপুর শহরের প্রবেশদ্বার বাবুরহাটের সড়ক ও জনপদ বিভাগের মতলব পেন্নাই সড়ক। সড়কটি চাঁদপুর শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হলেও স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তির বাণিজ্যের কারণে চলছে রাস্তার দু' পাশ দখলের প্রতিযোগিতা, ফলে রাস্তাটি সংকুচিত হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।এতে করে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রী ও পথচারীরা, আর ঘটে যাচ্ছে দুর্ঘটনা।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নামে বাবুরহাটের আশিকাটি মৌজায় ৪নং বি এস খতিয়ানে ৭টি দাগে মোট ২৭.১৯ একর সম্পত্তি রেকর্ড রয়েছে। ৪নং বি এস খতিয়ানের শ্রেণীভেদে ২১৭ দাগে সড়ক ১৫.৬০ একর, ২১৪/১২০৭ দাগে ভিটি ০.২৮ একর, ১২৫১ দাগে নয়নজুলি ১.৪০ একর, ১২৫২ দাগে সড়ক ১.৩৪ একর, ১২৫৩ দাগে খাল ১.৫৮ একর, ১৩২৯ দাগে খাল ৩.১৯ একর, ২০৫৩ দাগে খাল ৩.৮০ একর সহ মোট ২৭.১৯ একর সম্পত্তি বি এস খতিয়ানে রেকর্ড হয়। সড়ক ও জনপদ বিভাগের তদারকির অভাব ও কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী অর্থের কাছে ম্যানেজ হওয়ার কারনেই তাদের সম্পত্তি বেদখল হয়ে যায়। সম্পত্তি উদ্ধারেও সড়ক ও জনপদ বিভাগের নেই কোন কার্যকর ভূমিকাও। এই সম্পত্তির অভিভাবকহীনতার কারনে দিনকে দিন চলছে বাবুরহাট বাজারে সরকারি সম্পত্ত দখলের প্রতিযোগিতা। খাল দখলের পর এবার চলছে রাস্তার পাশ দখল। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার দিবাগত রাতেই সড়ক ও জনপদের রাস্তার কাপেটিং এর সাথেই জায়গা দখল করে তৈরী করা হয় বিশাল একটি দোকান। যা নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়েছে সকলের মাঝে।এভাবেই রাতে রাতেই তৈরী হচ্ছে নিত্যনতুন দোকানপাট। আবার কাপেটিং এর দু পাশেই রয়েছে বড় বড় চায়ের দোকান, ফুটপাতে মাংসের দোকান, পানের দোকান, একাধিক ফলের দোকান। সন্ধা হলে আবার ভ্যান দিয়ে ফুটপাত দখল করে মূল রাস্তাকে আরো সংকোচিত করে রাখে। বাবুরহাট পেন্নাই সড়কে পৌরসভার নির্দিষ্ট কোন স্ট্যান্ড না থাকায়, সড়কের পাশ দখলের কারনে সি এন জি, অটো, রিক্সা বাধ্য হয়ে রাস্তার উপর স্ট্যান্ড করে রাখতে হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি থামিয়েই যাত্রী উঠানামা করাতে হচ্ছে। আর এতে করে সড়কের যানবাহন চলাচলের রাস্তাটি আরো ছোট হয়ে যাচ্ছে, তার কারনে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ঘটে যাচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।

মতলব পেন্নাই সড়কটি দিয়ে চাঁদপুর থেকে ঢাকা আসা-যাওয়া করার জন্য সহজ ও কময় সময় লাগে। তাই সবসময় এই সড়কটি সাধারণ যাত্রী সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারদের একমাত্র পচন্দের রাস্তা। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি ও মেয়াদ উত্তীর্ণ বাজার কমিটির কিছু সদস্যের যোগসাজশে এই দখল বাণিজ্য চলছে। রাস্তার পাশে সামান্য একটা চকি বা ক্যারেট নিয়ে বসতে হলে এডভান্স হিসেবে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা।
চাঁদপুর অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির একাধিক সদস্যরা বলেন চাঁদপুর সদর হাসপাতাল সহ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে মুমূর্ষ রোগীদের ডাক্তার উন্নত চিকিৎসা জন্য ঢাকা রেফার করে। মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসা করার জন্য আমাদের ঢাকা নিতে হয়। ঢাকা যাওয়ার জন্য মতলব পেন্নাই সড়কটি ব্যবহার করি।কিন্তু বাবুরহাটের যানজটের কারনে অনেক সময় আমাদের এখানেই এক ঘন্টা, আর্ধা ঘন্টা যানজটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এতে করে রোগীর অবস্থা অনেক সময় আরো খারাপ হয়ে যায়। অনেক রোগী আবার পথে মারা যায়। আমরা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করি। কারা এই ফুটপাত বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকা করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক। রাস্তার পাশ দখলমুক্ত হলে, সি এনজি গাড়ি রাস্তার পাশে রাখতে পারত, আর এতে করে যানজট কিছুটা কম হত বলে আমরা বিশ্বাস করি।
এদিকে গত বছরের ২৯ জুন বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভার টার্মিনালের মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্বেই জেলা পরিষদ একটি বির্তকিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। যার কারনে বাবুরহাট বাজারে দেখা দেয় আরো চরম বিশৃঙ্খলা। ২০১৪ সালে চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিকাটি মৌজার সি এস ৬৩২ দাগ, হালে বি এস ২১৭ দাগে ১১.৬৫ শতাংশ সম্পত্তি জেলা পরিষদের দাবি করে চাঁদপুর বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভে টার্মিনালে ৭৬৮/২০১৪ নং মোকদ্দমা ও নিষেধাজ্ঞা দায়ের করেন। জেলা পরিষদের দায়ের করা বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভে টার্মিনালের মোকদ্দমার বিপরীতে চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উক্ত দাগের সম্পত্তি সড়ক ও জনপদ বিভাগের দাবি করে জোড়ালো ভাবে মামলার লিখিত জবাব দেন। যাহা দুতরফা ভাবে মোকদ্দমাটি আদালতে এখনো চলমান রয়েছে। কিন্তু আদালতের মামলা নিষ্পত্তি/ রায়ের পূর্বেই জেলা পরিষদ গত বছরের ২৯ জুন বাবুরহাট বাজারের তাদের সম্পত্তি দাবি করে বির্তকিত একটি উচ্ছে অভিযান পরিচালনা করে। যদিও ১২৫১ দাগের পশ্চিম অংশে ১০৯১/২০২০ মহামান্য হাইকোর্টের রিট ও নিষেধাজ্ঞা চলমান এবং সি এস ১৯১ নং খতিয়ানে নাল ৬৩৩ দাগে , সি এস ও বি এস ম্যাপ অনুয়ায়ী খাল ও চলাচলের রাস্তা ৬৩৫ দাগে মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাও চলমান রয়েছে। আইনগত জটিলতা এড়াতে উচ্ছেদ পরিচালনার পূর্বে দাগন্বয়ের মধ্যে সরেজমিন সুস্পষ্ট সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসক সীমানা নির্ধারন করে দিলেও ১২৫১ দাগ ও ২১৭ দাগে উচ্ছেদের অনুমতি দেয়নি।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহকারী উপকৌশলী মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন দখলের বিষয়টি আমাদের চোখের আড়ালে ঘটেছে। কে বা কারা শুক্রবার দিবাগত রাতে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে সড়ক ও জনপদ বিভাগের অগোচরে এই দোকান নির্মান করেছে তা আমরা জানি না। আমি এখনই লোক পাঠাচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাছাড়া বাবুরহাট পেন্নাই সড়কের অবৈধ স্থাপনার তালিকা আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দিয়েছি। সরকারি জায়গা দখল করে কেউ থাকতে পারবে না।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!