বাংলাদেশের শিল্প খাতের অন্যতম পরম বন্ধু কোরিয়ান ব্যবসায়ী কিহাক সাং পেলেন সম্মানসূচক নাগরিকত্ব। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় মঙ্গলবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এক জমকালো আয়োজনে তাঁর হাতে এই সম্মান তুলে দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
চেয়ারম্যান কিহাক সাং শুধু একজন বিনিয়োগকারী নন, আশির দশকে যখন বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের সূচনা হয়, তখন থেকেই তিনি ছিলেন এই খাতের নিরব সাহসী সঙ্গী। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইয়াংওয়ান করপোরেশন আজ দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। হাজার হাজার মানুষকে কাজের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক আয়ে তিনি রেখেছেন অনন্য অবদান।
‘মোহাম্মদ আলীর মতোই সম্মান’
এটি সেই সম্মান যা ১৯৭৮ সালে পেয়েছিলেন কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী। যুদ্ধবিরোধী অবস্থানে দাঁড়িয়ে আমেরিকান সরকারের সঙ্গে বিরোধে জড়ানো আলী বলেছিলেন, ‘যদি আমেরিকা থেকে বের করে দেয়, আশ্রয় নেওয়ার মতো একটা দেশ আমার আছে।’ আজ কিহাক সাংকে সেই সম্মান দিয়ে বাংলাদেশ আবারও প্রমাণ করল—এই দেশ কৃতজ্ঞতাবোধে অনন্য।
নাগরিকত্ব মানে শুধু পাসপোর্ট নয়, ইতিহাসের অংশ হওয়া
যদিও এই সম্মানসূচক নাগরিকত্ব রাষ্ট্রীয় সব অধিকার দেয় না—যেমন ভোটাধিকার বা প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই—তবু এই স্বীকৃতি একজন বিদেশির প্রতি রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শামীম খান জানান, “এই নাগরিকত্ব হলো রাষ্ট্রীয় সম্মান, আইনগত অধিকার নয়। তবে এই নাগরিকরা ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা পাবেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে তাদের অবদান স্বীকৃতি পাবে।”
কিহাক সাং–এর দীর্ঘ পথচলা
৭৮ বছর বয়সী কিহাক সাং জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় ধরে জড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের সঙ্গে। আশির দশকে বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে যাত্রা শুরু করেই তিনি হয়ে উঠেছেন পোশাকশিল্পের অগ্রদূত। তাঁর শিল্পসাম্রাজ্যে হাজারো মানুষের জীবিকা, পরিবারের হাসি আর দেশের রফতানি প্রবাহ।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের পরামর্শেই কয়েক সপ্তাহ আগে চীনের হাইনানে আলোচনার মাধ্যমে শুরু হয় এই সম্মাননা প্রদানের প্রক্রিয়া। এরপর দ্রুততার সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ সরকার।
আরও যাঁরা পেয়েছেন এই সম্মান
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে মাত্র কয়েকজন বিশিষ্ট বিদেশিকে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন মোহাম্মদ আলী, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ডা. এড্রিক বেকার, মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ফাদার মারিনো রিগন ও ক্রিকেট ইতিহাস গড়া গর্ডন গ্রিনিজ।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!