গণিতকে ঘিরে একটি স্টার্টআপ হতে পারে—এমন ভাবনা অনেকেরই মাথায় আসেনি। তবে তিন তরুণ—আহমেদ শাহরিয়ার, এস এম মাহতাব হোসাইন ও আশরাফুল আল শাকুর ‘বাংলার ম্যাথ’ নামের একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলে দেখিয়ে দিয়েছেন ভিন্ন এক পথ।
- গণিত অলিম্পিয়াড থেকে বন্ধুত্ব, সেখান থেকে উদ্যোগ
‘বাংলার ম্যাথ’-এর যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালে। তবে এর পেছনে কাজ করেছে দীর্ঘদিনের একটি বন্ধুত্ব। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম আলো গণিত অলিম্পিয়াডের মঞ্চে তাদের পরিচয়। এরপর জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া থেকে বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়। তিনজনেরই ভালোবাসার বিষয় ছিল গণিত, যা তাদের একত্রিত করেছে।
আহমেদ শাহরিয়ার অ্যারোনটিক্যাল প্রকৌশলে স্নাতক করেছেন ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে। এস এম মাহতাব হোসাইন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল নিয়ে পড়েছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে। আর আশরাফুল আল শাকুর পুরকৌশলে ডিগ্রি নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে।
- ‘বাংলার ম্যাথ’-এর লক্ষ্য ও কাজ
শুরুতে বাংলার ম্যাথের উদ্যোক্তারা শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গণিত অলিম্পিয়াড প্রকল্পে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তারা বিভিন্ন মডিউল তৈরি করেন। এরপর দেখতে পান, শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করাও প্রয়োজন।
আহমেদ শাহরিয়ার বলেন, “আমরা মূলত দুটি সমস্যার সমাধানে কাজ করছি। প্রথমত, ক্লাসরুমে গণিত শেখার উপকরণের ঘাটতি কমিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের গণিত দক্ষতার বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা তৈরি করা।”
‘গণিতের ঝুলি’, ‘আর্ট অব লার্নিং ম্যাথ’সহ নানা পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলার ম্যাথ শিক্ষার্থীদের কাছে গণিতকে সহজ ও আনন্দদায়ক করে তোলার চেষ্টা করছে।
- হাজারো শিক্ষার্থীর কাছে গণিত
এ পর্যন্ত বাংলার ম্যাথের কর্মশালায় ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। ১০০-এর বেশি শিক্ষকের গণিত শিক্ষার মান উন্নয়নেও কাজ করেছে তারা। পাশাপাশি গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষার সীমাবদ্ধতা দূর করতে দেশের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে শুরু করে শহুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
আশরাফুল আল শাকুর বলেন, “আমরা গণিতকে শুধু ক্লাসরুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখি না। প্রোগ্রামিং ও রোবোটিকসে শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করার জন্য ‘ম্যাথ টু রোবোটিকস’ কর্মশালার আয়োজন করি। শহর এবং প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমানভাবে কাজ করছি।”
- আন্তর্জাতিক সাফল্যের পথে
বাংলার ম্যাথের উদ্যোক্তারা শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করছেন তারা।
মাহতাব হোসাইন বলেন, “এ বছর আমরা চারটি আন্তর্জাতিক গণিত আয়োজনে অংশ নিয়েছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্ব মঞ্চে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে। এমনকি আমাদের ‘গণিতের ঝুলি’ ফিনল্যান্ডের হানড্রেড গবেষণা সংস্থার শীর্ষ ১০০ উদ্ভাবনী শিক্ষা উদ্যোগের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।”
- উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
‘বাংলার ম্যাথ’ গণিত শিক্ষার উন্নয়ন এবং আগ্রহ বাড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তাদের এই প্রচেষ্টা বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখছে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!