ঈদ মানেই এখন শুধু তারকা নির্ভর অ্যাকশন বা রোমান্স নয়, বরং গল্পনির্ভর সিনেমার দিকেও দর্শকের আগ্রহ বাড়ছে—আর তারই উজ্জ্বল প্রমাণ ‘দাগি’। এই সামাজিক ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত সিনেমাটি নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনার ঝড় উঠেছে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে।
‘দাগি’র মূল কাহিনিতে উঠে এসেছে একজন দাগি আসামির শাস্তি শেষে সমাজে পুনর্বাসনের আত্মসংঘাত, অনুশোচনা ও মানবিক আবেদন। দীর্ঘদিন পর এমন একটি সিনেমা উপহার পেল বাংলা সিনেমা, যা পরিবারের সবার সঙ্গে বসে দেখার মতো। যেখানে নেই অশ্লীল সংলাপ, অতিরঞ্জিত মারপিট কিংবা অযাচিত ভিলেনি—বরং আছে বাস্তবধর্মী এক জীবনগাঁথা।
সুনেরাহ বিনতে কামাল এই সিনেমায় একজন বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করে নতুনমাত্রা এনেছেন, আর আফরান নিশো তাঁর অভিনয়ে ‘সুড়ঙ্গ’–এর চেয়েও বেশি পরিপক্বতার ছাপ রেখেছেন। তমা মির্জা, গাজী রাকায়েত, শহীদুজ্জামান সেলিমের মতো অভিজ্ঞ শিল্পীরা নিজ নিজ চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় উপহার দিয়েছেন।
পরিচালক শিহাব শাহীন খুব নিখুঁতভাবে সমাজে প্রচলিত মিডিয়া ট্রায়াল ও গুজবের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তুলেছেন। যেভাবে আজকাল মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে মানুষের জীবন ধ্বংস করা হয়, সে বিষয়টি খুব মানবিক ও সংবেদনশীলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও সিনেমায় সীমান্ত অঞ্চলের চোরাচালান, মাদক সমস্যার দিকটিও আলতোভাবে তুলে ধরা হলেও, মাদকের ভয়াবহ কুফল তুলে ধরায় আরও জোর দেওয়া যেত।
‘দাগি’র সিনেমাটোগ্রাফি, সংলাপ, লোকেশন, পোশাক ও সাজসজ্জা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। গানের কথা ও সুর সিনেমার আবহের সঙ্গে অসাধারণভাবে মিশেছে। সবচেয়ে বড় কথা, সিনেমাটি প্রমাণ করেছে—অশ্লীলতা ছাড়াও দর্শকের মনে দাগ কাটা যায়, যদি গল্প ও নির্মাণ ঠিক থাকে।
শিহাব শাহীন এবার প্রমাণ করেছেন, শুধু ঈদ নয়, সারা বছরই মানসম্মত গল্পের সিনেমা নির্মাণ সম্ভব। ‘দাগি’ তেমনই একটি সাহসী ও মানবিক চলচ্চিত্র, যা বাংলা সিনেমার নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত দেয়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!