এলপিজির দাম বাড়ানোর ধারা অব্যাহত রেখে এবার ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে আরও ৩৫ টাকা। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চলতি অক্টোবর মাসের জন্য নতুন এ দর নির্ধারণ করেছে। এখন ১২ কেজি এলপিজির দাম হবে ১,৪৫৬ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১,৪২১ টাকা।
এছাড়া, এলপিজি খাতে অন্যান্য আকারের সিলিন্ডারের দামও অনুপাতে বেড়েছে। একই সঙ্গে, গাড়িতে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের প্রতি লিটারের দাম ৬৫.২৬ টাকা থেকে বেড়ে ৬৬.৮৪ টাকায় পৌঁছেছে। এ নিয়ে টানা চার মাস ধরে এলপিজির দাম বাড়ানো হয়েছে।
আজ বুধবার (২ অক্টোবর) বিইআরসি এই নতুন দাম ঘোষণা করে। তবে সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা সাড়ে ১২ কেজির এলপিজির দাম আগের মতোই ৬৯০ টাকা রাখা হয়েছে। যদিও সরকারি কোম্পানির বাজারে সরবরাহের পরিমাণ মাত্র ১-১.৫ শতাংশ হওয়ায় তা ভোক্তাদের খুব একটা নাগালের মধ্যে নেই।
এবারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে, প্রতি কেজি এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২১ টাকা ৩২ পয়সা, যা গত মাসে ছিল ১১৮ টাকা ৪৪ পয়সা। বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় সরবরাহকৃত এলপিজির দামও একইভাবে বেড়েছে।
এর আগে জুলাই মাসে ১২ কেজির এলপিজির দাম ১,৩৬৬ টাকা থেকে বেড়ে ১,৩৭৭ টাকা হয়েছিল। এরপর আগস্টে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে তা ১,৪২১ টাকায় পৌঁছেছিল। টানা মূল্যবৃদ্ধির এই ধারা নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ভোক্তারা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করছেন, অনেক ব্যবসায়ী কমিশনের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করছে।
এলপিজির মূল্য নির্ধারণে সৌদি আরামকোর ঘোষিত সৌদি সিপি মূল্যকে ভিত্তি ধরা হয়। বাংলাদেশের ২০টি কোম্পানি এলপিজির কাঁচামাল আমদানি করে, আর ডলারের বিনিময় হারের ওঠানামাও মূল্যের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলে। প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণেই তৈরি হয় এলপিজি, যা বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ, পরিবহন ও শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হয়।
দেশজুড়ে পাইপলাইনে গ্যাসের সংকট থাকায়, বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে বাসাবাড়ির জন্য এলপিজি একটি নিত্যপণ্যে পরিণত হয়েছে। দেশের এলপিজির বাজারের ৯৯ শতাংশই বেসরকারি খাতের নিয়ন্ত্রণে।
বিইআরসি প্রতি মাসের শুরুতে এলপিজির নতুন মূল্য ঘোষণা করে, কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ থেকে যাচ্ছে।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে ভোক্তারা আর্থিকভাবে চাপে পড়ছেন। বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও পরিবহন খাতে খরচ বাড়ছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। গ্যাসের দাম না কমলে ভবিষ্যতে জনজীবনে আরও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাজারে নজরদারি জোরদার করার জন্য ভোক্তা অধিকার সংস্থা এবং সাধারণ জনগণ বিইআরসির কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের বক্তব্য, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ইতোমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে বিইআরসি।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য গ্যাসের মূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করাই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!