যুক্তরাষ্ট্রকে একশটির মতো পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে এক চিঠিতে এই প্রস্তাবনা দেন বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ঘোষণার প্রেক্ষিতে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে—শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কি আলাদা করে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া সম্ভব? নীতিমালা, রেওয়াজ ও ট্যারিফ কাঠামোর কারণে বিষয়টি আদতে জটিল।
শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া কতটা বাস্তবসম্মত?
বাংলাদেশে এইচএস (HS) কোড অনুযায়ী শুল্কহার নির্ধারণ করা হয়। কোনো নির্দিষ্ট দেশের জন্য আলাদাভাবে শুল্ক হার নির্ধারণ করার সুযোগ নেই। ফলে যদি কোনো পণ্যে শুল্ক হ্রাস বা শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়, তা সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য হবে।
যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি বাংলাদেশ গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়, তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ড নয়, জাপানের টয়োটা, কোরিয়ার হুন্দাই, ভারতের টাটা—সবই শুল্কমুক্তভাবে দেশে প্রবেশ করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী আমদানি হয়?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এর মধ্যে ২৬২ কোটি ডলারের পণ্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য আমদানি করা হয়েছে।
এই আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের পণ্যে কোনো শুল্ক নেই—যেমন গম, তুলা, সয়াবিন বীজ ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয়, তার মধ্যে পুরোনো লোহার স্ক্র্যাপ (রড তৈরির কাঁচামাল) শীর্ষে রয়েছে, যার পরিমাণ ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।
তালিকায় আরও রয়েছে বিউটেন (এলপিজির উপাদান), সয়াবিন বীজ, উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, গ্যাস টারবাইন, হুইস্কি, উড পাল্প, পুরোনো জাহাজ, গাড়ি, কাঠবাদাম ইত্যাদি।
বাংলাদেশে কত পণ্যে কত শুল্ক?
বর্তমানে বাংলাদেশে ৭ হাজার ১৫৯টি পণ্যের ওপর শুল্ক নির্ধারিত রয়েছে। এর মধ্যে—
মূলধনি যন্ত্রপাতিতে ১%
মৌলিক কাঁচামালে ৫%
মধ্যবর্তী কাঁচামালে ১০%
সেমি প্রস্তুত পণ্যে ১৫%
সম্পূর্ণ প্রস্তুত পণ্যে ২৫%
এ ছাড়া পণ্যের উপর ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও অগ্রিম কর আরোপ করা হয়।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে জীবন রক্ষাকারী ও অত্যাবশ্যকীয় ৩২৯টি পণ্যের আমদানিতে কোনো শুল্ক নেই। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্যপণ্য, সার, গ্যাস, ওষুধ, কৃষি উপকরণ ও শিল্পের কাঁচামাল।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ কী রপ্তানি করে?
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে তৈরি পোশাক—যার পরিমাণ ২০২৪ সালে ৭০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
এ ছাড়া রপ্তানি হয় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, প্লাস্টিকপণ্য ও মুদিপণ্য। চামড়াজাত পণ্য বছরে ৮–১০ কোটি ডলার, ওষুধ ২–৩ কোটি ডলার এবং অন্যান্য পণ্য ১–২ কোটি ডলারের মতো।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!