সাম্প্রতিক সময়ে ইসলাম ধর্ম, মহান আল্লাহ এবং প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের ঘটনায় দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এসব ঘটনা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে তিনি এই চিঠিটি প্রকাশ করেন। এতে তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা ও ইসলাম অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।
ইসলাম অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি
চিঠিতে শায়খ আহমাদুল্লাহ উল্লেখ করেন, সম্প্রতি কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ইসলাম ধর্ম, মহান আল্লাহ ও নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে কটূক্তি করছে। এসব কর্মকাণ্ড সুপরিকল্পিত, দুরভিসন্ধিমূলক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বিশেষভাবে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন কমিটির একজন সদস্যের বিতর্কিত ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সাম্প্রতিক পোস্ট ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ চরম ক্ষোভ, হতাশা ও অসন্তোষে ভুগছে।
জাতীয় স্থিতিশীলতা রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান
চিঠিতে আরও বলা হয়, যদি এসব উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তবে দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এজন্য দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেন তিনি।
ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের সুপারিশ
শায়খ আহমাদুল্লাহ প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ জানান, ইসলাম ধর্মের প্রতি অবমাননা বন্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে যারা এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশের প্রতিটি সমাজের কিছু মূল্যবোধ রয়েছে, যা রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু মানুষ প্রতিনিয়ত এসব মূল্যবোধের বিপরীত কাজ করছে। ফলে দেশে বারবার অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন বাংলাদেশে আমরা এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি চাই না।"
ধর্মপ্রাণ জনগণের প্রত্যাশা পূরণের দাবি
বর্তমান সরকার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, "এই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন ইসলামপ্রিয় মানুষ। তাদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকারকে অবশ্যই জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে হবে।"
তিনি সতর্ক করে বলেন, "যদি জনগণ দেখেন, তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে বারবার আঘাত আসছে, কিন্তু সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না, তবে তারা সরকারের ওপর থেকে আস্থা হারাতে পারে। দেশের মানুষ যদি রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে, তাহলে তা ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।"
সরকারের প্রতি ৫টি গুরুত্বপূর্ণ অনুরোধ
চিঠিতে শায়খ আহমাদুল্লাহ ৫টি দাবি উত্থাপন করেন—
- ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।
- এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সরকারি প্রকল্প থেকে বাদ দিতে হবে।
- যারা ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছে, তাদের বরখাস্তপূর্বক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
- এ ধরনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হিসেবে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে।
- জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে যে সরকার ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষায় সম্পূর্ণ সচেষ্ট থাকবে।
শেষে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের কল্যাণ কামনা করে বলেন, "মহান আল্লাহ আপনাকে কল্যাণ দান করুন এবং জাতির সেবায় নিয়োজিত রাখুন।"
সারসংক্ষেপ
শায়খ আহমাদুল্লাহর এই খোলা চিঠি দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এটি সরকারের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, যাতে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয় এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় কতটা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!