মানুষ আল্লাহর এক বিশেষ সৃষ্টি। তাঁকে সম্মানিত করার দায়িত্ব যেমন জীবিত অবস্থায় পালন করা জরুরি, তেমনি মৃত্যুর পরও সেই সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে হয়। ইসলামে মৃত্যু পরবর্তী প্রতিটি প্রক্রিয়া সুশৃঙ্খলভাবে পালনের নির্দেশনা রয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দাফন-কাফনের সুনির্দিষ্ট নিয়ম দিয়েছেন, যা মৃত ব্যক্তির প্রতি জীবিতদের কর্তব্য পালন ও পরকালীন জীবনের প্রস্তুতির অংশ।
মানুষ, আল্লাহর সম্মানিত সৃষ্টি
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সম্মান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। কোরআনের সুরা বনি ইসরাইলে উল্লেখ আছে, “আমি আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি, তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দিয়েছি, উত্তম রিজিক দিয়েছি এবং সৃষ্ট জীবের অনেকের ওপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।” (আয়াত: ৭০) তাই জীবনের মতো মৃত্যুর পরও মানুষের মর্যাদা রক্ষা করাই ইসলামের শিক্ষা।
মৃত্যু পরবর্তী করণীয়
মৃত ব্যক্তির জন্য ইসলামে কিছু বিশেষ করণীয় রয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আমি তালহার মধ্যে মৃত্যুর আলামত দেখতে পাচ্ছি। সে মারা গেলে দ্রুত দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করবে।” (আবু দাউদ ৩১৫৯) এটি ইঙ্গিত দেয় যে, মৃত্যুর পর দ্রুত ও সুশৃঙ্খলভাবে দাফন-কাফনের কাজ সম্পন্ন করা উচিত।
জীবিতদের দায়িত্ব
মৃতের প্রতি জীবিতদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। এর মধ্যে আছে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা, জানাজার নামাজ পড়া, দাফনের ব্যবস্থা করা এবং শেষযাত্রায় অংশগ্রহণ করা। এসব কাজের মাধ্যমে জীবিতরা মৃতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং নিজেরাও পরকালীন পুরস্কারের অধিকারী হতে পারে।
মৃতের গোসল- পবিত্রতার গুরুত্ব
ইসলামে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া অত্যাবশ্যক। হাদিস থেকে জানা যায়, ফেরেশতারা আদম (আ.)-কে পানি ও বড়ই পাতার মাধ্যমে গোসল দেন। (তাবারানি শরিফ ৮২৬১) এই পদ্ধতি আমাদের জন্য সুন্নত হিসেবে নির্ধারিত। মৃতকে পবিত্র করে কাফনের জন্য প্রস্তুত করা হয়, যা সম্মান প্রদর্শনের অংশ।
কাফন পরানোর নিয়ম
গোসলের পর মৃত ব্যক্তিকে সাদা কাপড়ে কাফন পরানো হয়। এটি মৃত্যুর পর সম্মান প্রদর্শনের অন্যতম প্রক্রিয়া। ইসলামে পুরুষ ও নারীর কাফনের নিয়ম ভিন্নভাবে নির্ধারিত। এই নিয়মগুলো পালনের মাধ্যমে মৃতকে শেষবারের মতো সম্মান জানানো হয়।
জানাজার নামাজ - ফরজে কিফায়া
মৃত ব্যক্তির ওপর জানাজার নামাজ পড়া ফরজে কিফায়া। এটি মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও সুপারিশের অংশ। জানাজায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে মুসলিম সমাজের সকলে মৃতের জন্য দোয়া করে, যা পরকালে তার জন্য সহায়তা হয়।
দাফন: শেষ প্রক্রিয়া
মৃত ব্যক্তিকে ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী কবরস্থ করা হয়। কোরআনে বলা হয়েছে, “তারপর তিনি তাকে মৃত্যু দেন এবং তাকে কবরস্থ করেন।” (সুরা আবাসা, আয়াত: ২১) ফেরেশতারা আদম (আ.)-কে দাফন করার মাধ্যমে এই প্রথা শুরু করেন। এই প্রক্রিয়াটি মানবজাতির জন্য একটি সুন্নত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসলামে মৃত্যু হলো পরকালীন জীবনের প্রবেশদ্বার। এই প্রক্রিয়াগুলো মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যম, যা কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং জীবিতদের ভালোবাসা, দায়িত্ব ও মর্যাদার প্রতিফলন। আমাদের উচিত, এসব বিধান অনুসরণ করে নিজের পরকালীন জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!