পবিত্র কোরআনের কিছু নির্দিষ্ট আয়াত রয়েছে, যেগুলো তিলাওয়াত করলে বা শুনলে একজন মুমিন মুসলমানের জন্য সিজদা করা ওয়াজিব হয়ে যায়। একে বলা হয় সিজদায়ে তিলাওয়াত। এটি ফরজ নয়, তবে ওয়াজিব হওয়ায় না করলে গুনাহ হবে।
সিজদায়ে তিলাওয়াতের বিধান ও পদ্ধতি
সিজদার আয়াত পড়ার পর হাত না উঠিয়ে “আল্লাহু আকবার” বলে সরাসরি সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে “সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা” তিনবার পড়তে হবে। এরপর আবার “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদা থেকে উঠে দাঁড়াতে হবে।
এই সিজদার জন্য নামাজের মতো দু’টি সিজদা করতে হবে না, বসার প্রয়োজন নেই, তাশাহহুদ বা সালামও দিতে হয় না। তবে কেউ চাইলে বসে বসেও এ সিজদা আদায় করতে পারে।
কেন সিজদায়ে তিলাওয়াত করা জরুরি?
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যখন একজন মানুষ সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা করে, তখন শয়তান ব্যথিত হয়ে বলে, “আদম সন্তান সিজদার আদেশ পেয়েই সিজদা করল এবং জান্নাতি হলো, অথচ আমি সিজদার আদেশ অমান্য করেছিলাম, তাই জাহান্নামি হলাম।” (মুসলিম, হাদিস: ১৩৩)
সিজদার আয়াত চেনার উপায়
কোরআনের মধ্যে ১৪টি আয়াতে সিজদার বিধান রয়েছে। এসব আয়াত সাধারণত বিশেষ চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত থাকে, যা দেখে সহজেই চেনা যায়।
সিজদার আয়াতসমূহ:
১. সুরা আরাফ (৯ম পারা, ২০৬ নম্বর আয়াত)
২. সুরা রাদ (১৩ পারা, ১৫ নম্বর আয়াত)
৩. সুরা নাহল (১৪ পারা, ৫০ নম্বর আয়াত)
৪. সুরা বনি ইসরাইল (১৫ পারা, ১০৭-১০৯ নম্বর আয়াত)
৫. সুরা মারইয়াম (১৭ পারা, ৫৮ নম্বর আয়াত)
৬. সুরা হজ (১৭ পারা, ১৮ নম্বর আয়াত)
৭. সুরা ফুরকান (১৯ পারা, ৬০ নম্বর আয়াত)
৮. সুরা নামল (১৯ পারা, ২৫-২৬ নম্বর আয়াত)
৯. সুরা সিজদা (২১ পারা, ১৫ নম্বর আয়াত)
১০. সুরা সোয়াদ (২৩ পারা, ২৪ নম্বর আয়াত)
১১. সুরা হা-মিম সিজদা (২৪ পারা, ৩৭-৩৮ নম্বর আয়াত)
১২. সুরা নাজম (২৭ পারা, ৬২ নম্বর আয়াত)
১৩. সুরা ইনশিকাক (৩০ পারা, ২১ নম্বর আয়াত)
১৪. সুরা আলাক (৩০ পারা, ১৯ নম্বর আয়াত)
তিলাওয়াতে সিজদার বিশেষ দোয়া
নবী (সা.) তিলাওয়াতে সিজদায় গিয়ে এই দোয়া পড়তেন:
سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ
বাংলা অর্থ:
“আমার মুখমণ্ডল সেই মহান রবের উদ্দেশ্যে সিজদা করল, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর প্রবল ক্ষমতায় আমাকে শুনার ও দেখার শক্তি দিয়েছেন।”
সিজদার আয়াত তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে সতর্কতা
যেহেতু সিজদার আয়াত শুনলে বা পড়লে সিজদা করা ওয়াজিব হয়ে যায়, তাই এসব আয়াত উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করলে উপস্থিত অন্যদেরও সিজদা করতে হবে। এজন্য একা থাকলে বা যেখানে সমস্যা হতে পারে, সেখানে আস্তে তিলাওয়াত করাই উত্তম।
সিজদায়ে তিলাওয়াত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। এটি পালন করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় এবং জান্নাতের পথে অগ্রসর হওয়া যায়। তাই মুসলিম উম্মাহর উচিত কোরআন তিলাওয়াতের সময় এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পালন করা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!