ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রথম কিবলা ও তৃতীয় পবিত্রতম স্থান—মসজিদুল আকসা। মক্কা ও মদিনার পর এ মসজিদই মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র। পবিত্র মিরাজ রাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এখানেই নামাজ আদায় করেছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত নিদর্শন এটি।
কিন্তু এ পবিত্র স্থান ঘিরেই ইহুদি সম্প্রদায়ের একটি গোপন ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা সামনে এসেছে। তারা বিশ্বাস করে, আল-আকসার অবস্থানই তাদের ‘টেম্পল মাউন্ট’, যেখানে তাদের ফার্স্ট ও সেকেন্ড টেম্পল অবস্থিত ছিল এবং যেখানেই গড়ে তুলতে চায় তাদের বহু প্রতীক্ষিত ‘থার্ড টেম্পল’।
📜 ইতিহাসের পেছনে ছুটছে রাজনীতি
ইহুদি বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রাচীনকালে হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কুরবানি দেয়ার জন্য এ স্থানেই নিয়ে এসেছিলেন। তারা মনে করে, প্রায় ৩ হাজার বছর আগে হযরত সুলাইমান (আ.) নির্মাণ করেন তাদের ‘ফার্স্ট টেম্পল’, যা পরে ধ্বংস করে দেয় ব্যাবিলনীয়রা। এরপর পারস্য সম্রাট সাইরাসের নির্দেশে নির্মাণ হয় ‘সেকেন্ড টেম্পল’। কিন্তু ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্য সেটিও ধ্বংস করে দেয়।
ইহুদিদের বিশ্বাস, থার্ড টেম্পল না হলে তাদের ‘মাসিহ’ বা ত্রাণকর্তা (দাজ্জাল) আগমন করবেন না। তাই এই তৃতীয় উপাসনালয় নির্মাণকে তারা তাদের স্বর্ণযুগে ফিরে যাওয়ার পথ মনে করছে।
🏗️ ভিজ্যুয়ালাইজেশন ও প্রস্তুতি
ইতোমধ্যে ‘থার্ড টেম্পল’-এর নকশা তৈরি করে রেখেছে তারা। এমনকি আল-আকসার পাশের একটি ভবনের ছাদে সেই নকশার ভিজ্যুয়াল রূপও স্থাপন করেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দুটি সংগঠন—টেম্পল ইনস্টিটিউট ও বনেহ ইসরাঈল। তাদের দাবি, টেম্পল নির্মাণে দরকারি প্রাচীন সামগ্রী, পাথর ও পবিত্রতা অর্জনের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন।
এ পবিত্রতা অর্জনের অংশ হিসেবে ‘লাল গাভী’ বলির বিষয়টি উঠে এসেছে। ইহুদি ধর্মমতে, নির্দোষ লাল গাভী পুড়িয়ে তার ছাই দিয়ে পবিত্র হতে হয়। ইতোমধ্যে তারা এই বলি উৎসব শুরু করার চেষ্টা করেছে।
💣 গণহত্যা ও আল-আকসার লড়াই
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইসরাইলের ফিলিস্তিনে চলমান সামরিক আগ্রাসনের পেছনে মূল লক্ষ্যই হচ্ছে আল-আকসা দখল ও থার্ড টেম্পল নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া। গত বছর হামাসের ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ পরিকল্পনাও এই ইসরায়েলি অভিপ্রায় জানতে পারার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছে বলে ধারণা।
ইসরাইল এখনো থেমে নেই। আক্রমণ ও দখলদারির মাধ্যমে ধ্বংস করে দিচ্ছে ফিলিস্তিনি জনপদ। প্রাণ হারাচ্ছে লাখো নিরীহ মানুষ। প্রশ্ন উঠছে—আল-আকসা দখলের লক্ষ্যেই কি এই রক্তস্নাত পরিকল্পনা?
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!