ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় উঠেছিল। অনেকেই বলছিলেন, ‘১৩ তারিখের পর সব বদলে যাবে।’ বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থকেরা তাদের স্ট্যাটাসে ১২ ফেব্রুয়ারি লিখেছিলেন, ‘কাল বিরাট সুসংবাদ আসছে।’
এই আশার পেছনের কারণ ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। ধারণা করা হয়েছিল, এই বৈঠকের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যেতে পারে। এমনকি কেউ কেউ ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘কাল সব উল্টে যাচ্ছে। কেউ পালানোর পথ পাবে না।’
বৈঠক হলো, কিন্তু কিছুই বদলাল না
১৩ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প-মোদি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, তবে বাস্তবে কোনো নাটকীয় পরিবর্তন দেখা গেল না। বরং এই বৈঠকের পর হতাশা ছড়িয়ে পড়ে তাদের মধ্যে, যারা ভেবেছিলেন মোদি হয়তো ট্রাম্পকে বুঝিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্র বদলে দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক ভারতীয় সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘বাংলাদেশ ইস্যুতে আপনার অবস্থান কী? কারণ আমরা দেখেছি, বাইডেন প্রশাসন সরকারের পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছিল।’ জবাবে ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এটি ভারতের বিষয় এবং এ নিয়ে মোদিই কাজ করছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলার ভার আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির ওপর ছেড়ে দিচ্ছি।
মোদির নীরবতা, হতাশ আওয়ামী সমর্থকেরা
ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর অনেকেই তাকিয়ে ছিলেন মোদির দিকে। কিন্তু মোদি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। বরং তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। মোদির এই পাশ কাটানো কৌশল অনেক আওয়ামী সমর্থকের আশার গুড়ে বালি ঢেলে দেয়।
যারা ফেসবুকে ‘মোদিজি! মোদিজি!’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন, তারা এখন যেন চুপ। মোদির নীরবতায় তারা হতাশ ও বিভ্রান্ত।
কেন মোদির ওপর এত আস্থা?
এই ঘটনা দেখিয়ে দেয়, আওয়ামী লীগ এখন ভারতের ওপর কতটা নির্ভরশীল। অনেক নেতা-সমর্থক বিশ্বাস করেছিলেন, মোদি হয়তো ট্রাম্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে কিছু পরিবর্তন আনতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মোদি নিজেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কোনো বক্তব্য দেননি।
রাজনীতিতে লজ্জার সংকট?
এই ধরনের রাজনৈতিক নির্ভরতা এবং অন্ধ আশাবাদ দেখে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, রাজনীতিতে কি ব্যক্তিত্ববোধেরও দরকার নেই? রাজনৈতিক দলগুলোর কি লজ্জা ও আত্মসম্মানবোধও হারিয়ে গেছে?
ইতিহাস বলে, যখন রাজনীতি ব্যক্তিত্ববোধ হারিয়ে ফেলে, তখন তা এক ধরনের আত্মসমর্পণের রূপ নেয়। ঠিক যেমনভাবে রোমান সম্রাট নিরো তার চারপাশের মোসাহেবদের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে নিজের রাজত্ব হারিয়েছিলেন, অনেকটা সেভাবেই এখন বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক অনুসারী মোদির দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু মোদি সাড়া দিলেন না।
শেষ পর্যন্ত শিক্ষা কী?
এই ঘটনা শেখায় যে, ভিন্ন দেশের ওপর ভরসা করে নিজের দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা যায় না। দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করতে হলে জনগণের ওপরই নির্ভর করতে হবে, বাইরের শক্তির ওপর নয়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!