ইমন সরকার, ভালুকা উপজেলা প্রতিনিধি।।
একটি মহৎ উদ্যোগের নেপথ্যে আছেন চারজন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ—মোঃ আশিক, মোঃ রাকিব, মোঃ দেলোয়ার সরকার এবং মোঃ পলাশ। তারা ফ্রিল্যান্সার, শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ী হিসেবে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হলেও, গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একত্রিত হয়েছেন একটি অভিন্ন লক্ষ্যে।
এই চারজন তরুণই ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা। এখান থেকেই তারা তাদের মানবিক সহায়তার কার্যক্রম শুরু করেছেন।
এই উদ্যোগের শুরুটা হয়েছিল মোঃ আশিকের মাধ্যমে। তিনি একজন ফিলিস্তিনি ভাইয়ের সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে যোগাযোগ করেন এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফান্ড পাঠান। ভিডিও কলের মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে ওই ভাই টাকাটি পেয়েছেন এবং সেটি সঠিকভাবে ব্যবহারও করেছেন। এই সাফল্যের পরেই তারা বড় পরিসরে কাজ শুরু করার সাহস পান।
এ পর্যন্ত তারা গাজায় পাঠিয়েছেন মোট ১,৪৩,০০০ টাকা। এই অর্থ দিয়ে গম, শাক-সবজি, রুটি, পানি, তেল, লবন, আলু, পেয়াজ ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য কেনা হয়েছে। গাজার খান ইউনিস অঞ্চলে অবস্থিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান আব্দুল্লাহ এবং তার টিম প্রায় ৩০টি পরিবার—অর্থাৎ আনুমানিক ১৫০ জন মানুষকে এই খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন।
মোঃ আশিক জানান, “প্রথমদিকে মানুষ আমাদের কার্যক্রমে বিশ্বাস রাখতে পারছিল না। কিন্তু গাজা থেকে আব্দুল্লাহ ও ইব্রাহিম ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কথা বলার পর এবং প্রাপ্ত অর্থ ও খাদ্যসামগ্রীর প্রমাণ দেখানোর পর মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে।”
এই কাজের জন্য গাজার বাসিন্দারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আব্দুল্লাহ, ইব্রাহিম এবং তাদের পরিবার তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এমনকি আব্দুল্লাহ আশিকের ছবি দিয়ে ব্যানার বানিয়ে বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। একবার ভিডিও কলে আব্দুল্লাহর মায়ের সঙ্গেও কথা বলেন মোঃ আশিক।
এই কাজ করতে গিয়ে তারা অনেক আবেগঘন মুহূর্তের সম্মুখীন হয়েছেন। “আমরা নিজেরা সুন্দর খাবার খাচ্ছি, আর ওখানে মানুষ দিনের পর দিন একবেলা খেয়ে বাঁচে। এই অনুভূতিই আমাদের চালিত করেছে,” বলেন মোঃ আশিক।
এই উদ্যোগের পেছনে মূল প্রেরণা ছিল মানবিকতা। “আমরা মুসলিম জাতি। যুদ্ধ করতে না পারলেও, অন্তত আর্থিকভাবে পাশে দাঁড়াতে পারি—এই ভাবনা থেকেই শুরু করি,” বলেন মোঃ রাকিব।
সহায়তা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর হয়েছে স্থানীয় মসজিদের সভাপতিদের সঙ্গে আলোচনা করা। এমনকি বিভিন্ন মসজিদের খতিব ও ইমাম সাহেবরাও উৎসাহ দিয়েছেন। ডুবালিয়াপাড়া মসজিদের খতিব সাহেব এবং ইমাম সাহেব সহ বলেছেন “তোমরা সাহায্য উঠাতে থাকো কোন দরকার হলে অবশ্যই আমাদেরকে জানাবে”
ভবিষ্যতে এই কার্যক্রমকে আরও সংগঠিতভাবে চালানোর ব্যাপারে আশাবাদী এই তরুণরা। মোঃ আশিক বলেন, “যদি বড় ধরনের সহযোগিতা পাই—সরকারি হোক বা বেসরকারি—তবে এই উদ্যোগকে আরও বড় পরিসরে, সুসংগঠিতভাবে চালিয়ে যেতে চাই।”
পরবর্তী সহায়তার জন্য তারা পরিকল্পনা করছেন স্থানীয় মসজিদে মুসল্লিদের মাঝে প্রচারণা চালিয়ে অর্থ সংগ্রহ এবং বাজার ও দোকানপাট থেকেও সহায়তা আহ্বান করার। ইতোমধ্যেই এলাকার আরও কিছু তরুণ এই উদ্যোগ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেরা অর্থ সংগ্রহ শুরু করেছেন।
প্রবাসীদের সম্ভাব্য অবদানের কথা বলতে গিয়ে মোঃ আশিক বলেন, “দেশের বাইরে থেকেও প্রবাসী ভাই ও বোনেরা যদি সাহায্য করেন, তাহলে তাদের অবদান অপরিসীম। তারা দেশের বাইরে থেকেও গাজার পরিবারগুলোকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারবেন, এবং সেই টাকা দিয়ে খাদ্য কিনে অন্তত একবেলা পেট ভরে খেতে পারবে অসহায় মানুষগুলো। আমি মনে করি, এটি সত্যিই এক অসাধারণ ও মহৎ কাজ হবে।”
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!