বাংলাদেশে কোকেইন চোরাচালানের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মূলত আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত হচ্ছে। ২০২৩-২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, শুধু ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রায় ৪৮.৩৫৮ কিলোগ্রাম কোকেইন উদ্ধার করেছে। এর আগে ২০২৩ সালে ১৩ কিলোগ্রাম এবং ২০২২ সালে ৪.৫৭ কিলোগ্রাম কোকেইন উদ্ধার হয়েছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে ঢাকা বিমানবন্দরে দাখিল পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) যৌথ অভিযান চালিয়ে ৮.৩ কিলোগ্রাম কোকেইন উদ্ধার করেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ কোকেইন উদ্ধার।
ডিএনসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চোরাকারবারিরা বাংলাদেশকে ভারতের দিকে কোকেইন পাচারের একটি রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে, আফ্রিকার কিছু দেশ থেকে কোকেইন পাচার করা হচ্ছে, যার মধ্যে নাইজেরিয়া, তানজানিয়া, মালাওয়ি, কলম্বিয়া, পেরু এবং বলিভিয়া অন্তর্ভুক্ত। ডিএনসি’র পরিচালনা ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক তানভির মোমতাজ বলেন, "কোকেইন মূলত আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে আকাশপথে প্রবাহিত হচ্ছে, এবং এটি বাংলাদেশকে একটি ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।"
তিনি আরও বলেন, “কোকেইন তারপর বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করা হয়, কারণ আমাদের সীমান্ত অনেকটাই ঢিলা।”
বর্তমানে বাংলাদেশে কোকেইনের বাজার নেই, কারণ এটি অত্যন্ত দামী, প্রতি কিলোগ্রাম কোকেইনের দাম প্রায় ১০ কোটি টাকা। তবে, কোকেইন ছাড়া বাংলাদেশের বাজারে আরও তিনটি বড় ধরনের মাদক -- ইয়াবা, ফেনসিডিল, এবং হেরোইন -- প্রবাহিত হচ্ছে, যা দেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিএনসি’র মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এক সেমিনারে এসব তথ্য দেন।
ডিএনসি’র বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রায় ৭০০ কিলোগ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছে, যা ২০২২ সালের ৩৩৮ কিলোগ্রামের চেয়ে দ্বিগুণ। ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে ৩৫৭ কিলোগ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইয়াবা ও ফেনসিডিল উদ্ধার কমেছে।
ডিএনসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে মাদকাসক্তরা এখন ক্রিস্টাল মেথের মতো নতুন মাদকের প্রতি ঝুঁকছে। তবুও, ইয়াবা ও ফেনসিডিল চোরাচালানকে এখনও একটি বড় উদ্বেগ হিসেবে দেখছেন তারা।
ডিএনসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের চারটি প্রধান সীমান্ত পয়েন্ট -- টেকনাফ, রাজশাহী, যশোর, এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া -- দিয়ে মাদক চোরাচালান হয়ে থাকে। তবে, অন্যান্য সীমান্ত পয়েন্ট থেকেও মাদক প্রবাহিত হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভির আহমেদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সামাজিক সচেতনতা এবং সম্প্রদায় ভিত্তিক ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!