ফরিদপুরে গত দুই বছরে ঈদকে ঘিরে তিনটি বড় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৯ জন। প্রতিটি ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও, তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
সবশেষ দুর্ঘটনা ঘটে গত মঙ্গলবার সকাল ১১টায়, ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের বাখুন্ডা এলাকায়। দ্রুতগতির একটি বাস ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা খেয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই সাতজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালের ২৪ জুন, ঈদুল আজহার আগ মুহূর্তে ভাঙ্গার মালিগ্রাম এলাকায় এক্সপ্রেসওয়েতে একটি অ্যাম্বুলেন্স সেতুর বিভাজকে ধাক্কা খেয়ে আগুন ধরে যায়। এতে চালকসহ প্রাণ হারান আটজন। সে সময় গঠিত কমিটি ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দিয়েছিল, যার মধ্যে ছিল: এক্সপ্রেসওয়েতে কন্ট্রোল ক্যামেরা বসানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধে তদারকি, লাইসেন্সবিহীন চালকদের প্রতিরোধ, গতি নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন এবং হাইওয়ে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি। কিন্তু বাস্তবায়নে নেই কোনো অগ্রগতি।
২০২৪ সালের ১৬ এপ্রিল কানাইপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ১৪ জন নিহত হন। তদন্তে উঠে আসে চালকের ঘুমভাব, অধিক গতি, লেন ভঙ্গ এবং অবৈধ অটোরিকশার চলাচলের কথা। এর পরেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।
হাইওয়ে পুলিশের জনবল ও যানবাহনের সংকটের কথা জানিয়ে মাদারীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার শাহীনূর আলম বলেন, “আমাদের অবস্থা এখন ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সরদারের মতো।”
বিআরটিএর পক্ষ থেকেও নেই গতি নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসানোর কোনো উদ্যোগ। সহকারী পরিচালক মো. নাসির উদ্দীন বলেন, “বর্তমানে সব যানবাহনে গতি কমানোর যন্ত্র স্থাপনের পরিকল্পনা আমাদের হাতে নেই।”
তবে আশার কথা জানিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা। তিনি বলেন, “আগের ও নতুন সুপারিশ একত্র করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সমন্বয় সভা করা হবে। বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি সংস্থাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে এবং নিয়মিত মনিটরিং চালানো হবে।”
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!