সন্ধ্যার ব্যস্ত বাজার। কেউ বাড়ি ফিরছিলেন, কেউ বাজার করছিলেন। এমন সময় একটি যাত্রীবাহী বাস হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কে ছুটতে শুরু করে। ধাক্কা দেয় একের পর এক যানবাহন ও পথচারীকে। ঘটনার ভয়াবহতায় মুহূর্তেই এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের পঞ্চগড় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। নিহত হন হোসনে আরা মালা (৪২), যিনি পঞ্চগড় পৌরসভার বাসিন্দা এবং বেসরকারি সংস্থা 'আশা’র মাঠ কর্মকর্তা ছিলেন। আহত হন আরও ১৪ জন, যাঁদের মধ্যে ৫ জন এখন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার বিবরণ
নুসাইবা এক্সপ্রেস নামের একটি বাস তেঁতুলিয়া থেকে পঞ্চগড় শহরের দিকে যাচ্ছিল। পঞ্চগড় বাজার এলাকায় পৌঁছানোর পর বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দ্রুত গতিতে ধাক্কা দেয় বিভিন্ন যানবাহন ও পথচারীকে। এ সময় হোসনে আরা তাঁর সহকর্মী নুর ইসলামের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে ঋণ আদায়ের কাজে যাচ্ছিলেন। বাসটি তাঁদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে হোসনে আরা ছিটকে পড়ে বাসের চাকার নিচে চাপা পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান।
আহত নুর ইসলাম বলেন, ‘আমরা মিঠাপুকুর কার্যালয় থেকে পঞ্চগড় বাজারে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পেছন থেকে বাসটি ধাক্কা দিলে আমি এক পাশে পড়ে যাই। পরে দেখি, লোকজন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।’
আফজাল হোসেন নামের এক ইজিবাইকচালক বলেন, ‘বাসটি পেছন থেকে “চাপাও” বলে এগিয়ে আসে। ইজিবাইকে থাকা যাত্রীরা ভয়ে লাফ দিয়ে নামেন। বাসটি আমার ইজিবাইককে প্রায় ৫০ গজ টেনে নিয়ে যায়।’
বিক্ষোভ ও তদন্ত
দুর্ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ বাসটি জব্দ করে এবং চালকের সহকারী সুমন ইসলামকে আটক করে। তবে চালক পালিয়ে গেছেন। স্থানীয় লোকজন ধারণা করছেন, বাসটির ব্রেক ফেল করায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক এইচ এস এম সোহরাওয়ার্দী জানান, নিহতের লাশ আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
এই দুর্ঘটনা আবারও সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও বাস মালিক কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জরুরি।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!