স্টাফ রিপোর্টার - ইমরান হক।।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি মশিউর রহমানের সাথে সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির গভীর সখ্যতার অন্তরালে ছিল তদবির বাণিজ্য। এক কথায় মশিউর ছিলেন দীপু মনির ঘুষ বাণিজ্যের ফড়িয়া। অভিযোগ রয়েছে, তার সময়েই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির জাল ছড়িয়েছে উচ্চশিক্ষা খাতের প্রায় সর্বস্তরে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রেফতার হয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার দ্বিতীয় দফা রিমান্ড চলছে। গত প্রায় ১২ বছর ধরে পররাষ্ট্র, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রী।
দীপু মনি সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মশিউর রহমানের সঙ্গে গভীর সখ্যতা বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে অনেকটাই ছায়া মন্ত্রীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন অধ্যাপক মশিউর। এ নিয়ে তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী, অধ্যাপক মশিউর ও ডা. দীপু মনির ত্রি-মুখী স্নায়ুযুদ্ধ ছিল সবার জানা।
তদবির-বাণিজ্যের জন্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মশিউর রহমান অন্তত অর্ধশতবার চাঁদপুরে দীপু মনির বাসায় আসা-যাওয়া করেছেন। এসময়ে তার সঙ্গী হিসেবে থাকতো পুরান বাজার ডিগ্রী কলেজের প্রিন্সিপাল রতন কুমার মজুমদার। রাত্রি যাপন করতেন তাদের বাসায়।
তবে তদবির বাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে রফা দফা হত দীপু মনির ভাই জাওয়াদুর রহিম টিপুর সাথে। এ সময়ে তার বাসায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগমনে তদবির বাণিজ্যের হাট বসতো। মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ পর্যন্ত তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হওয়ার সুযোগ ছিল না। শিক্ষা প্রশাসনে প্রতিটি বদলি সিদ্ধহস্তে দিপু মনির ভাই টিপু নিয়ন্ত্রণ করতেন।
দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার দুই মাসের মাথায় খোদ চাঁদপুর সরকারি হাসান আলী ও মাতৃপীঠ সরকারি হাইস্কুলের দশ জন অভিজ্ঞ শিক্ষককে দেশের দুর্গম এলাকায় এক চিঠিতে তাৎক্ষণিক বদলি করেন। কোনো প্রকার অভিযোগ না থাকলেও জামায়াত-বিএনপি তকমা লাগিয়ে এদের স্ট্যান্ড রিলিজ করানো হয় তখন। যার পেছনে কলকাঠি নাড়েন দীপু মনির ভাই টিপু ও চাঁদপুর পুরান বাজার ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার।
দীপু মনি ও মশিউর দু’জনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন কিংবা একসঙ্গে অতিথি হওয়া ঢাকা থেকে চাঁদপুরে নিয়মিত যাতায়াত ছিল সবার চোখে পড়ার মতো। তবে হয়রানি, মামলা-হামলার ভয়ে সবাই তা চেপে যেতেন। রাতের ভোটে বিজয়ী ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ডা. দীপু মনি। শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মশিউর রহমানকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগের বন্দোবস্ত করেন তিনি। মূলত এরপর থেকেই ছায়া শিক্ষামন্ত্রীর ভূমিকা পালন করতে থাকেন অধ্যাপক মশিউর।
অভিযোগ রয়েছে, তুলনামূলক জুনিয়র ও প্রশাসনিকভাবে অনভিজ্ঞ হলেও ব্যক্তিগত পছন্দের কারণে অধ্যাপক মশিউরকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি থেকে সরাসরি হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন ডা. দীপু মনি।
শিক্ষা নিয়ে ওই অর্থে গবেষণা না থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রায় সব অনুষ্ঠানেই অধ্যাপক মশিউর ছিলেন নিয়মিত অতিথি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর অধিকাংশ অনুষ্ঠানে মশিউরের অপ্রাসঙ্গিক উপস্থিতি বা অতিথি হওয়া ছিল দৃষ্টিকটু। শেষের দিকে তো দীপু মনির অনুষ্ঠানে মশিউর অতিথি হওয়া যেন রীতি হয়ে উঠেছিল।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!