চাঁদপুর মেঘনা নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ ইনকাম নিরবিচ্ছিন্ন রাখছিল দীপু মনি গং।
জাপানি অর্থায়নে চাঁদপুর মেঘনার চরে বেসরকারিভাবে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার যে উদ্যোগ নেয়া হয় সেটি বালু উত্তোলনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে, এ আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের কিছু হটাতে বাধ্য করেন। ফলে ৬ হাজার কোটি টাকার বড় একটা বিনিয়োগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় চাঁদপুরে পর্যটন শিল্পে হতাশা নেমে আসে। ২০ হাজার মানুষের একসাথে অবকাশ যাপনের সুবিধা সম্বলিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হতো । চাঁদপুর হতো পর্যটন নগরী। শেষ পর্যন্ত বালু সিন্ডিকেটের কাছে বলি হয়ে যায় এ প্রকল্পটি।
চাঁদপুরে সরকারি-বেসরকারি যে কোন উন্নয়ন মানেই দীপুমণি ও তার ভাই টিপুর অলিখিত কমিশন। সরকারিভাবে কর্তাদের সাথে ভাগ বাটোয়ারা সহজতর হলেও বেসরকারি পর্যায়ে অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যায়। তাই এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেনি। উদ্যোক্তারা ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করার পরও প্রজেক্টটি নিয়ে আর অগ্রসর হতে পারেননি।
চাঁদপুর মেঘনার চরে বেসরকারিভাবে একটি পর্যটন শিল্প গড়ার লক্ষ্যে ০৪ বছর পূর্বে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রক্রিয়ার বেশিরভাগ সম্পন্ন করা হয়। ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটন শিল্পটি গড়ে তোলার সেই উদ্যোগটি আর আলোর আজও মুখ দেখেনি।
জাপানের অর্থায়নে ব্লু রিভার আইল্যান্ড রিসোর্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেডের কর্তৃক আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট করার উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হতো। কিন্তু সেটি আর হয় নি। কেন হয়নি সে ব্যাপারে এতোদিন মুখ খোলেননি উদ্যোক্তাদের কেউ। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার ব্রাহ্মণ সাখুয়া গ্রামের অধিবাসী মো. মাইনুল হাসান দোলন পাটোয়ারী পরিচালক হিসেবে প্রকল্পটির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি জানান লোকাল কমিউনিকেশন, প্ল্যানিং ও এক্সিকিউশনের দায়িত্বের কিছু অংশ নিয়ে কাজ করেন তিনি। মনসুর আলম মুন্না নামে আরেকজন পরিচালক ছিলেন। সেসময় প্রকল্পের ইনোগোরেশন প্রোগ্রামে চাঁদপুরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যমকর্মী এবং জাপানের বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিনিয়োগকারীরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে তাঁদের আগ্রহের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। সেই আলোকেই পরবর্তীতে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক প্রকল্পটির খসড়া রূপরেখা তৈরি করে তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী ডা. দীপু মনির সাথে বৈঠক করেন। তিনি তাদেরকে প্রকল্পের প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দেন।
মূলত এই প্রকল্পটির জন্যে চাঁদপুর শহরের পাড় ঘেঁষে ৩০/৩৫ বছরের পুরোনো ছোট ছোট রিভার আইল্যান্ড বা স্থায়ী চরের ৬ শ’ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হতো। প্রকল্পের চূড়ান্ত রূপরেখা অনুযায়ী একটি প্রস্তাবনা সেসময় চাঁদপুর ডিসি অফিসে প্রেরণ করা হয়। সেই প্রস্তাবনায় তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে ৬ শ’ একর জমি অধিগ্রহণের অনুরোধ করা হয়। প্রকল্প প্রস্তাবনার একটি শর্ত ছিলো, রিসোর্টটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে প্রকল্প এলাকার ৬/৭ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোনো ড্রেজিং বা নদী খনন কার্যক্রম যেন না হয়। কিন্তু এই প্রস্তাবনা প্রেরণের পর কোনো এক অজানা কারণে সরকারি প্রশাসনের সহযোগিতায় ভাটা পড়ে। এ প্রকল্পের ফাইল এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ঘুরতে থাকে। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেলওয়ে, সড়ক অধিদপ্তর, নদী রক্ষা কমিশন, বন অধিদপ্তর থেকে ট্যুরিজম বোর্ডসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট জায়গার অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করেন বলে জানান মাইনুল হাসান দোলন পাটোয়ারী । কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এই ফাইল আর আলোর মুখ দেখে না বলে জানান তিনি। এখন ফাইলটিও আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানান প্রকল্পের এই পরিচালক।
তিনি আরো জানান, এই স্থবিরতার জন্য ওই প্রকল্প এলাকার আশেপাশে তো বটেই, এমনকি প্রকল্পের জন্যে নির্ধারিত চরগুলোতেও স্থানীয় তৎকালীন মন্ত্রী ডা.দীপু মনির ও তার ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুর টাকার মেশিন হিসাবে পরিচিত বালুখেকো সেলিম খান মিলে সমানে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করেন। বালু উত্তোলন করায় ইতোমধ্যেই মেঘনা নদীর দুটি চর সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গেছে । মুলত সেলিম খানের বালু সিন্ডিকেটের সুবিধার জন্যই ফাইল আটকে থাকে বলে জানান মাইনুল ইসলাম দোলন পাটোয়ারী। তিনি আরো জানান স্থানীয় প্রশাসনের চূড়ান্ত অসহযোগিতায় পরবর্তীতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মারাত্মকভাবে ভাটা পড়ে।
চাঁদপুর পৌরসভার সদ্য অপসারণকৃত মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল এর সাথে উদ্যোক্তারা ফের যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের কিছু জমি আছে, তারা চাইলে সেখানে কিছু করতে পারেন। উদ্যোক্তারা পুনরায় প্রকল্পের খসড়া নতুন করে তৈরি করে সেখানে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। নতুন করে প্রকল্প স্টাডি, ভূমির মান যাচাইসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন নেয়াসহ প্রয়োজনীয় কাজ মোটামুটি গুছিয়ে আনার পর মেয়রের কাছ থেকে অসহযোগিতামূলক আচরণ পেতে শুরু করেন বলে জানান।
এদিকে জাপানের বিনিয়োগকারীরা কয়েকবার এসে প্রকল্পের প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শন করেও গেছেন । পরে জানা যায় সেই জমিগুলোও এই মেয়র তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট খাতে ব্যবহারের জন্যে অন্য একটি কোম্পানিকে দিয়ে দিয়েছেন ।
আর এভাবেই দীপু মনি গং এর লোভের কাছে চাঁদপুর জেলার ৬ হাজার কোটি টাকার বড় একটা বিনিয়োগের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!