BDCN24 হল সংবাদ, মতামত এবং বিনোদনের জন্য একটি বাংলাদেশ ভিত্তিক মাল্টিমিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। এটি পাঠক এবং শ্রোতাদের রাখার জন্য একটি ২৪/৭/৩৬৫ এর প্ল্যাটফর্ম
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর কাসেমিয়া ছিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার দুই শিক্ষক মুহাম্মদ দিদার হোসাইন ও মোহাম্মদ হাসানের মাঝে হাতাহাতির (মারামারি) ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার (২৪ জানুয়ারি) মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল হাশেমের নির্দেশনায় অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন অধ্যক্ষ মুহাম্মদ শামছুদ্দিন।এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে মাদরাসা চলার সময় অধ্যক্ষের অফিস কক্ষে ও অফিস কক্ষের সামনে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা জানান, ক্লাস নিয়ে দুই শিক্ষককের মধ্যে কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে হাতাহাতি (মারামারি) হয়েছে। এ ঘটনার বিচার দাবিতে আজ বুধবার মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে মাঠে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াসে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে মাদরাসার প্রভাষক দিদার হোসেন নবম শ্রেণির ক্লাস নিতে গিয়ে বিলম্ব করেন। পরে তিনি ক্লাস শেষে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করলে বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চান অধ্যক্ষ। একপর্যায়ে সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ হাসান অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়ে শিক্ষক দিদারের সঙ্গে তর্কে জড়ান। এ নিয়ে অধ্যক্ষের সামনেই শিক্ষক দিদার ও হাসানের মারামারি হয়। পরে অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।এই ঘটনার পরের দিন বুধবার শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে মাদরাসার মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং তারা বিক্ষোভ করেন। পরে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির হস্তক্ষেপে এবং উল্লেখিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিলে ক্লাসে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় অভিভাকক ও এলাকাবাসীর মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এর আগেও শিক্ষার্থীদের মাঝে এক শিক্ষকের জামায়াতের বই বিতরণ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।এ দিকে উল্লেখিত বিষয়টি জানতে চাইলে প্রভাষক মুহাম্মদ দিদার হোসাইন জানান, একই সময়ে নবম শ্রেণি ও চতুর্থ শ্রেণি ক্লাস হওয়ার কারণে চতুর্থ শ্রেণিতে যেতে তাঁর বিলম্ব হয়। চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস শেষে বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চান অধ্যক্ষ। এসময় অধ্যক্ষের সাথে তার তর্ক-বির্তক হয়। পরে দুইজনের উচ্চস্বরে কথা শুনতে পেয়ে সহকারী শিক্ষক হাসান অধ্যক্ষের কক্ষে এসে শিক্ষক দিদারের উপর অতর্কিত হামলা করেন।তিনি অভিযোগ করেন বলেন, মোহাম্মদ হাসান সাহেব অযথা আমাকে হুমকি-ধমকি দেন এবং আমার উপর অতর্কিত হামলা করেন। তিনি চেয়ার নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসলে আমি ভয়ে স্যারের (অধ্যক্ষ) রুম থেকে বের হয়ে যাই। এরপর তিনি বাহিরে এসে ইট নিয়ে আবারো আমাকে মারার জন্য তেড়ে আসেন। পরে সভাপতির এক আত্মীয়সহ অন্যান্য শিক্ষকরা এসে আমাকে রক্ষা করেন।এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ হাসান বলেন, অধ্যক্ষ স্যারের সাথে দিদার সাহেবের সাথে তর্কাতর্কি হয়। দুইজনেই খুব উত্তেজিত ছিলেন, প্রায় হাতাহাতির অবস্থা। এসময় আমিসহ অন্যান্য শিক্ষকরা দিদার সাহেবেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি রাগান্বিত হয়ে তেড়ে এসে আমার গায়ে হাত তোলেন। পরে দুইজনের মাঝে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে আমি তাকে চেয়ার নিয়ে তেড়ে যাইনি।এ দিকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছ থেকে নীতি-নৈতিকথা ও শৃঙ্খলাবোধ শিক্ষা গ্রহণ করবে। এখন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে যদি একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষককে গালমন্দ করে এবং মারামারিতে লিপ্ত হন, তাহলে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে..?এ বিষয়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ মুহাম্মদ শামছুদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এ ঘটনার বিষয়ে সংবাদকর্মীরা তাঁর সাথে কথা বলতে চাইলে, তিনি কোনো কথা বলেননি।মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল হাশেম জানান, বিষয়টি মেনে নেওয়া যায়না। শিক্ষকরা যদি এমন অশালীন কাজের সাথে যুক্ত হন, তাহলে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে..? তিনি বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান এবং কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এই মর্মে জবাব চাওয়া হয়েছে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমি খোঁজ-খবর নিচ্ছি এবং পরবর্তীতে তদন্তপূর্বক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।