একসময় ভালোবাসা, অপেক্ষা, অভিমান কিংবা বিদায়ের অনুভূতি ফুটে উঠত এক টুকরো চিঠির পাতায়। কাগজে লেখা সেই আবেগমাখা শব্দগুলো আজ প্রযুক্তির দাপটে অনেকটাই বিস্মৃত। তবে সেই হারিয়ে যেতে বসা চিঠিকে আবারও জীবন্ত করে তুলেছে হুমায়ূন আহমেদের ভক্তদের সংগঠন হিমু পরিবহণ।
তাদের ব্যতিক্রমধর্মী ধারাবাহিক আয়োজন ‘ডাকপিয়ন ৩’—একটি চিঠি উৎসব—গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে শুরু হয়েছে। দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে প্রদর্শিত হচ্ছে দেশ–বিদেশ থেকে সংগৃহীত চিঠির এক অনন্য সংগ্রহ।
চিঠির আবেগ ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরতে ফেসবুক ইভেন্টের মাধ্যমে চিঠি আহ্বান করে হিমু পরিবহণ। এতে দারুণ সাড়া মেলে। কেউ পাঠিয়েছেন পুরোনো প্রেমপত্র, কেউবা পরিবারিক স্মৃতিচিহ্ন কিংবা কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির হাতে লেখা দুর্লভ চিঠি। সব মিলিয়ে বাছাইকৃত ৬৪টি চিঠি স্থান পেয়েছে এবারের প্রদর্শনীতে।
এই চিঠিগুলোর ধরনও নানা রকম—কিছু প্রিয়জনকে লেখা, কিছু কখনোই পাঠানো হয়নি, কিছু নিছকই ব্যক্তিগত, আবার কিছু চিঠি হয়ে উঠেছে ইতিহাসের দলিল। প্রদর্শনীর অন্যতম আয়োজক রুপম জানান, "আমরা এমন চিঠিগুলো বেছে নিয়েছি, যেগুলোর মধ্যে সময়, অনুভব এবং লেখার সৌন্দর্য একত্রে মিশে আছে।"
প্রথম দিনেই প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীর চোখে পড়ার মতো ভিড় দেখা গেছে। নানা বয়সী মানুষ চিঠির পৃষ্ঠায় ডুবে গেছেন স্মৃতিতে। কেউ থমকে দাঁড়িয়েছেন কোনো অক্ষরের সামনে, কেউ চোখ মুছেছেন নীরবে—নিজের হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা মনে করে।
হিমু পরিবহণের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই আয়োজন শুধু প্রদর্শনীর জন্য নয়, বরং নতুন প্রজন্মকে চিঠির আবেগ, সময় ও সম্পর্কের গল্প জানাতেই তাদের এই প্রয়াস।
আজ শনিবার বিকেল তিনটা থেকে শুরু হবে উৎসবের দ্বিতীয় ও শেষ দিনের প্রদর্শনী। দর্শনার্থীরা এবারও দেখতে পাবেন সেই ৬৪টি বাছাই করা চিঠি—যার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত, ঐতিহাসিক এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের দুর্লভ লেখা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!