চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (কেইপিজেড) পাহাড়ঘেরা এলাকায় আটকা পড়ে আছে তিনটি বন্য হাতি। বন উজাড় ও চলাচলের পথ সংকুচিত হওয়ায় খাদ্যাভাব দেখা দেওয়ায় প্রায়ই তারা লোকালয়ে চলে আসছে। এতে প্রাণহানিসহ ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
সম্প্রতি কেইপিজেড এলাকায় হাতির আক্রমণে তিন মাস বয়সী এক শিশু মারা যায়। এরপর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে চার দিনের মধ্যে হাতি সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানায়।
হাতির আবাস ধ্বংস: বন বিভাগের অভিযোগ
বন বিভাগ বলছে, কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে পাহাড় ও বন কেটে হাতির আবাসস্থল ধ্বংস করছে। চলাচলের পথে বাড়ছে অবকাঠামো, যানবাহন ও মানুষের আনাগোনা। ফলে হাতিগুলো তাদের স্বাভাবিক পথ হারিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, হাতিগুলো তাড়াতে আগুন জ্বালানোসহ বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা তাদের আরও ক্ষিপ্ত করে তুলছে। এছাড়া আগে থাকা এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) বাতিল হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ বাস্তবায়নে গড়িমসি
বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নির্দেশনায় গঠিত ১২ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গত বছরের নভেম্বরে হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে একটি প্রতিবেদন দেয়। এতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ১৯টি সুপারিশ করা হয়।
এর মধ্যে রয়েছে—
🔹 পাহাড় ও বন কাটা বন্ধ করা
🔹 হাতির চলাচলের পথ উন্মুক্ত রাখা
🔹 পর্যাপ্ত ইআরটি মোতায়েন করা
🔹 হাতির আবাসস্থল উন্নয়ন ও খাদ্যের ব্যবস্থা করা
কিন্তু কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে আন্তরিক নয় বলে মনে করছে বন বিভাগ।
হাতির চলাচলের পথ সংকুচিত, কোথায় যাবে তারা?
আইইউসিএনের গবেষণা অনুযায়ী, কেইপিজেডের হাতিগুলো তৈলারদ্বীপ হয়ে বাঁশখালীর পাহাড়ে যাতায়াত করত। কিন্তু বন কেটে ফেলার ফলে তাদের চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ বলেন, "হাতিরা এখানেই আগে থেকেই ছিল, কিন্তু বন-জঙ্গল উজাড় হওয়ার কারণে তারা লোকালয়ে চলে যাচ্ছে। পরিবেশ ধ্বংস অব্যাহত থাকলে এ সংকট আরও তীব্র হবে।"
কেইপিজেডের দাবি: বন কাটা নয়, নতুন গাছ লাগানো হয়েছে
কেইপিজেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান বলেন, "আমাদের নিজস্ব ১০০ জন কর্মীকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে, যারা হাতি প্রতিরোধে কাজ করছে। বন কাটার অভিযোগ সঠিক নয়, বরং আমরা নতুন গাছ লাগিয়েছি।"
উত্তরহীন প্রশ্ন: বন কেটে উন্নয়ন, হাতির ঠাঁই কোথায়?
হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত আনোয়ারা ও কর্ণফুলী এলাকায় হাতির আক্রমণে ১৯ জন মারা গেছেন।
কিন্তু বন উজাড় ও অবকাঠামো গড়ে তোলার এই প্রবণতা চলতে থাকলে বন্যপ্রাণীদের জন্য ভবিষ্যৎ কী? কেইপিজেডের কর্তৃপক্ষ বন রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়েই সংশয় রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!