মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের ছিকরাইলে শীতের আগমনে জমে উঠেছে এক ভিন্ন আয়োজন। হাইল হাওরপারের একটি মাছের খামারের পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দুই শতাধিক খেজুরগাছ। এসব গাছে মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহের ব্যস্ততায় দিন কাটাচ্ছেন গাছিরা। ভোরবেলা টাটকা রসের স্বাদ নিতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে হাইল হাওরপারের এই খেজুরবাগানে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল পুকুরপাড়ে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা খেজুরগাছগুলো যেন শীতের রোদে নিজেদের মেলে ধরেছে। গাছের গলায় ঝোলানো মাটির হাঁড়ি ঢেকে রাখা হয়েছে নেট দিয়ে, যাতে বাদুড় কিংবা অন্য প্রাণী রস খেতে না পারে। গাছিরা বাটালি দিয়ে গাছের নির্দিষ্ট অংশ ছেঁচে হাঁড়ি বাঁধার কাজে ব্যস্ত।
গাছিদের একজন মুজিবুর রহমান। রাজশাহীর এই অভিজ্ঞ গাছি জানান, ছোটবেলা থেকে খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ করছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন একই এলাকার কলিম উদ্দিন ও আফজাল হোসেন। তাঁরা কার্তিক মাসের শুরুতে ছিকরাইলে আসেন এবং পুরো শীতকালজুড়ে রস সংগ্রহের কাজ করেন।
খামারটির ইজারাদার ইউসুফ হাসান জানান, গতবার রস সংগ্রহের পরিমাণ কম থাকায় লোকসান হয়েছে। তবে এবার রসের উৎপাদন ভালো হচ্ছে। প্রতিদিন একেকটি গাছে আধা লিটার থেকে দুই লিটার পর্যন্ত রস পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি লিটার রস ১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ভোর ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যেই রস তোলা ও বিক্রি শেষ হয়ে যায়।
গাছিরা বলেন, তাঁরা রস সংগ্রহের কাজে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেন। হাঁড়িতে নেট দিয়ে ঢেকে রাখা হয়, এবং দুজন নৈশপ্রহরী রাতে বাদুড় তাড়ানোর দায়িত্বে থাকেন। তাঁদের বেতন মাসে ২৫ হাজার টাকা, যা খামারের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়।
খামার-সংশ্লিষ্ট আবু সাঈদ জানান, এই অঞ্চলের আবহাওয়া খেজুর রসের জন্য আদর্শ নয়। শীত বেশি হলে রসের পরিমাণ আরও ভালো হতো। তবে রসের চাহিদা বেশি থাকায় গুড় তৈরি না করে কাঁচা রস বিক্রি করা হচ্ছে।
খেজুরবাগানে আগত দর্শনার্থীদের কেউ রস খেতে আসেন, কেউ ছবি তোলার আনন্দে মেতে ওঠেন। হাইল হাওরের এই প্রাকৃতিক আয়োজন মৌলভীবাজার অঞ্চলের মানুষদের কাছে এনে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা।
শীতের সকালে খেজুর রসের এই মধুর টানে মুখরিত হয়ে উঠছে হাওরপারের জনপদ।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!