শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি::
শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের জ্বীবদাড়া বাজারের দক্ষিণের হাওরের কয়েকশ হেক্টর বোরো ফসলি জমিতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে ফেটে গেছে ফসলি জমি। হাওরের জলমহালগুলোতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষক পরিবারগুলো পড়েছেন চরম বিপাকে। হুমকির মুখে পড়েছে ফসল।
স্থানীয়রা বলছেন, হাওরের জলমহালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় এই হাওরে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। জলমহালগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে খনন না করলে আগামীতে এই হাওরের ফসলি জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পড়বে বলে আশংকা করছেন কৃষকরা।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্র কাযার্লয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের উকারগাঁও মৌজার এসএ জেল নং—১৪৫, আরএস জেএল নং—০৫, ২৭৬ নং দাগে মোট ১৩.৩০ একর নিয়ে সুরাইয়া বিল জলমহাল রয়েছে। ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্র কাযার্লয়ের ৮৯৪ নম্বর স্মারকে জলমহালটি ১৪৩০—১৪৩২ বাংলা সনের জন্য জ্বীবদাড়া আদর্শ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ ইজারাপ্রাপ্ত হয়েছেন।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জ্বীবদাড়া বাজারের দক্ষিণের হাওরজুড়ে কয়েকশত হেক্টর জমিতে বোর ফসলের মাঠ। সবুজ রঙের ধান গাছগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। বিস্তীর্ণ হাওরজুড়ে বোর ফসল রোপণ করেছেন কৃষকরা। তবে জমিতে চরম সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। হাওরের মধ্যখানে ‘সুরাইয়া বিল’ জলমহালটিতে কোন পানি নাই। সেজন্য বিল আর জমি চেনা বড় দায়। হাওরের পলি পড়ে বিলটি ভরাট হয়ে গেছে। তাই জমি ও জলমহাল একই সমান্তরাল হয়ে গেছে। কোথাও পানি নাই, যা পানি ছিলো তা, কৃষকরা ব্যবহার করে ফেলেছেন গত কয়েকদিনে। ‘সুরাইয়া বিল’ জলমহালের সমিতির লোকজন কিছু কিছু জায়গায় নিজ উদ্যোগে খনন করে ডুবা তৈরি করছেন, তবে সেটি খুবই সীমিত। জলমহালটিতে বিগত বছরে সমিতির লোকজন যে কয়েকটি ডুবা তৈরি করেছিলেন তার অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। আর যেগুলোতে কিছুটা পানি ছিলো, সেগুলোও শুকিয়ে গেছে।
হাওরের কৃষক মো. এনামুল হক জানান, এই হাওরের আমার অনেক জমি আছে, অনেক ব্যয় করে জমিগুলো চাষাবাদ করেছি। এখন হাওরে চরম সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। হাওরের সুরাইয়া বিল জলমহালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় আমাদের এমন দুভোর্গের সৃষ্টি হয়েছে। কৃষিজমি বাঁচাতে সুরাইয়া বিল জলমহালটি খনন করতে হবে। বিলের ইজারাদাররাও প্রতি বছর খনন করেন, তবে এটি খুবই সামান্য। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যাপকভাবে এই জলমহাল খনন করা হলে, একদিকে কৃষি জমিও বাঁচবে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
জ্বীবদাড়া গ্রামের কৃষক সোহেল মিয়া জানান, জলমহলটি ভরাট হয়ে আমাদের জমি আর বিল সমান্তরাল হয়ে গেছে। এইবছর বৃষ্টি না হলে রোপণকৃত ফসল ঘরে তোলা অনিশ্চিত। হাওরের এই জলমহাল খনন করা হলে, জমিতে ধান ফলাতে পারবো, না হয় আগামীতে এই হাওরের সব জমিই অনাবাদি থেকে যাবে। গ্রামের লোকজন এই বিল ইজারা নিয়েছেন, ভরাট হওয়ার কারণে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিল খনন করলে সরকার ও কৃষকের লাভ হবে। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে ,আর কৃষকরা সোনালী ফসল ফলাতে পারবেন। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, জলমহাল যেন দ্রুত খনন করা হয়।
সুরাইয়া বিল জলমাহালের ইজারাদার জ্বীবদাড়া আদর্শ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি সাজিরুল ইসলাম জানান, বোর মৌসুমের শুরুতেই হাওরের কৃষকরা বিলের পানি দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। কিন্তু জলমহালটি একেবারেই ভরাট হয়ে গেছে। প্রতি বছরই নিজেদের অর্থে বিলের কিছু কিছু অংশ খনন করে ডুবা তৈরি করা হয়। কিন্তু এটায় কুলায় না। বৃহৎভাবে জলমহাল খনন করা প্রয়োজন। বিলটি ইজারা এনে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। খনন করলে সরকারেরও রাজস্ব আয় বাড়বে। বিলেও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ থাকবে। কৃষরাও ফসলি জমিতে চাষাবাদ করতে পারবেন। চলতি বছরেও আমরা এই বিলে পানি ধরে রাখার জন্য আমাদের সীমানায় একটি বাঁধ নিমার্ণ করতেছি। সম্পূর্ণ আমাদের টাকায় সেটি বাস্তবায়ন করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবিব জানান, এই হাওরের প্রচুর পরিমাণে বোরো জমি চাষাবাদ হয়েছে। তবে এখানে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে অবহিত করবো, সেই সাথে সেচ সংকট নিরসনের জন্য বিএডিসিকেও অবগত করবো। লক্ষ্যমাত্র অজর্ন করতে হলে, নির্বিঘ্নে বোর চাষাবাদ অব্যাহত রাখতে হবে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার নিবার্হী কর্মকর্তা ও জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সুকান্ত সাহা জানান, বিলটি ভরাট হওয়ার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ লিখিত আবেদন করনেনি। তিনি বলেন, প্রতিটি জলমাহালই খনন করা প্রয়োজন। এলাকার লোকজন বিলটি খননের জন্য আবেদন করলে ,আমরা তা যাচাই বাছাই করে খননের জন্য অনুমতি দিতে পারবো বা কোন প্রকল্পের মাধ্যমে সেটি খনন করাতে পারবো। সবার আগে কৃষিকে বাঁচাতে হবে। সরকারও সেদিকে খুবই আন্তরিক।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!