লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার বাজারের একমাত্র পুকুর দখল করে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করেছে জেলা পরিষদ।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার বাজারে শত বছরের পুকুর দখল করে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করে বেপরোয়া অনিয়ম ও লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে জেলা পরিষদের একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। মার্কেট নির্মাণ, দোকান বরাদ্দ থেকে শুরু করে কোনো ক্ষেত্রেই তোয়াক্কা করা হয়নি ন্যূনতম নীতিমালাও। এতে বাজারের একমাত্র ও ঐতিহ্যবাহী পুকুর বেদখল হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহের উৎস বন্ধের পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণেও ঝুঁকি বেড়েছে বলে জানান একাধিক ব্যবসায়ী। অবিলম্বে সিন্ডিকেটের কবল থেকে পুকুরটি পুনরুদ্ধারের দাবি জানান তারা।
সূত্রে জানাগেছে যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের উদ্যোগে আলেকজান্ডার বাজারে পুকুর দখল করে বহুতলবিশিষ্ট একটি মার্কেট নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। এতে ৭৫টি দোকান নির্মাণ করে জেলা পরিষদ। পুরো কাজ সমন্বয় করেন পরিষদের তৎকালীন সদস্য আমজাদ হোসেন।
নিয়মানুযায়ী ১ হাজার ২৫০ টাকা ইজারা ফি দিয়ে লটারির ভিত্তিতে বন্দোবস্ত দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো প্রকার প্রক্রিয়া ছাড়াই নামে-বেনামে পছন্দের লোকজনের কাছে দোকানগুলো বণ্টন করা হয়েছে। প্রথমে এক বছরের জন্য (একসনা) বন্দোবস্ত দেওয়া হলেও পরে আমজাদ হোসেন স্ট্যাম্প করে পজিশনভেদে দোকানগুলো সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকায় ৯৯ বছরের জন্য বিক্রি করেছেন। যদিও জেলা পরিষদের দাবি, এসব টাকা মার্কেট নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, হাতিয়ে নেওয়া টাকা আমজাদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কর্তাব্যক্তিরা ভাগাভাগির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
দোকান বরাদ্দ নেওয়া মালিক মোস্তফা মিয়া জানান, তিনি দুটি দোকান কিনেছেন ১৬ লাখ টাকা দিয়ে। জেলা পরিষদের ফরমে মোটা অঙ্কের টাকা উল্লেখ না থাকলেও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আমজাদ হোসেন একটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে তার কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। তবে কোনো স্ট্যাম্প দেখাতে রাজি হননি।
জেলা পরিষদের সাবেক মহিলা সদস্য রোফেনা আক্তারও একটি দোকান কেনেন আমজাদ হোসেনের কাছ থেকে। তিনি জানান, তার দোকানটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্প চুক্তির মাধ্যমে ক্রয় করেছেন। তবে বাজারের একমাত্র সরকারি পুকুর দখল করে দোতলা ভবন নির্মাণের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য না দিয়ে উল্টো গড়িমসি ও হয়রানি করেন। একপর্যায়ে তিনি এ প্রতিবেদককে বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান।
দোকানমালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়ার কথা থাকলেও কোনো প্রকার রসিদ ছাড়াই নগদ কালেকশনে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দোকান বরাদ্দের সময় ওপর মহলের কথা বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকাও হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে জানান তারা।
টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমি এখন দায়িত্বে নেই। আপনারা বর্তমান সদস্য ও পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন।’
তিনি বলেন, ‘কাজ করলে নিয়ম-অনিয়ম হবেই। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহানসহ পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমেই মার্কেট নির্মাণের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। তার নির্দেশে আমি সব কাজ করেছি।’
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ’জেলা পরিষদের সম্পত্তি বন্দোবস্তের বিধান একসনা হয়ে থাকে। এর বেশি কেউ বলে দিয়ে থাকলে তা প্রতারণা।’ অন্য অনিয়মের বিষয়গুলো তিনি খতিয়ে দেখবেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, ’জেলা পরিষদের পুকুর কিংবা সম্পদ দখল অন্যায়। প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!