সোমবার রাজধানী ঢাকায় একের পর এক সংঘর্ষ, বিক্ষোভ ও হামলার ঘটনায় জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। সকালে আগারগাঁও থেকে শুরু করে বিকেলে যাত্রাবাড়ী ও সন্ধ্যায় শাহবাগ পর্যন্ত নানা এলাকায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি দেখা দেয়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
- বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের সূত্রপাত
সকাল ১০টার দিকে খবর আসে, আগারগাঁও এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এতে সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই জানা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজনকে এনে শাহবাগে জড়ো করা হচ্ছে। দুপুরের দিকে যাত্রাবাড়ীতে একটি কলেজে হামলার খবর মেলে, যার জেরে ঢাকা–সিলেট মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়।
সন্ধ্যার পর শাহবাগে শুরু হয় সংঘর্ষ। সব মিলিয়ে রাজধানী ছিল নৈরাজ্যের মধ্যে, যা ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটায়।
- শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা ও সংঘর্ষ
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোববার রাতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে হামলা চালান। পরে এতে যোগ দেয় আরও কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থী। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। এর প্রতিক্রিয়ায় সোমবার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে পাল্টা হামলা চালান কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা।
পুরান ঢাকার শিক্ষার্থীরা ৫–৬ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পাল্টা হামলা চালালে পুরো মাতুয়াইল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাও এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ থাকে।
- সরকারি প্রতিক্রিয়া
সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, “শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা প্রশমনে সব চেষ্টাই করা হয়েছে। কিন্তু অ্যাগ্রেসিভনেস দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি, কারণ সংঘর্ষ বাড়ার আশঙ্কা ছিল। এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
- ছাত্র রাজনীতি ও উসকানির অভিযোগ
গত কয়েক মাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি ও সংঘর্ষের পেছনে রাজনৈতিক দল ও দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের উসকানি থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। ফেসবুকে এক পোস্টে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম দাবি করেন, “একটি দল শিক্ষার্থীদের সম্মানহানি করেছে এবং তাদের বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।”
- কেন এমন পরিস্থিতি?
শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন প্রায় প্রতিদিনই নগরীর স্বাভাবিক জনজীবনে বাধা সৃষ্টি করছে। অনেকের প্রশ্ন, এগুলো কি ন্যায্য দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে?
ঢাকা শহরে সম্প্রতি সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলার এই পরিস্থিতি সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!