রংপুর মহানগর পুলিশের সদ্য প্রত্যাহার হওয়া উপকমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগকারী ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ রোববার (১৬ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয়।
রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, লিপি খান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন।
ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগের সূত্রপাত
গত ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছার ব্যবসায়ী লিপি খানের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে একটি মামলা হয়। এরপর লিপি খান দাবি করেন, মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে উপকমিশনার শিবলী কায়সার তাঁর কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।
এই ঘটনায় ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন লিপি খান। তিনি ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিও রেকর্ডও জমা দেন। অভিযোগের পরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে।
থানায় হামলার অভিযোগ ও শিবলী কায়সারের প্রত্যাহার
অভিযোগের পর গত বৃহস্পতিবার কোতোয়ালি থানা-পুলিশ অমিত বণিককে থানায় ডেকে নেয়। বিকেলে লিপি খানের পক্ষে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পলাশ হাসান থানায় মামলা করতে গেলে সেখানে উপস্থিত হয়ে উপকমিশনার শিবলী কায়সার তাঁকে মারধর করেন এবং কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
পরবর্তীতে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় মামলা হলেও এতে শুধু অমিত বণিককে আসামি করা হয় এবং তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে গতকাল (শনিবার) শিবলী কায়সারকে রংপুর মহানগর পুলিশ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
লিপি খানের বিরুদ্ধে মামলার পেছনের ঘটনা
লিপি খানের বিরুদ্ধে করা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রংপুর নগরের গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে মিছিল থেকে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান এবং গুলি ছোড়েন।
এই ঘটনায় গত ১৩ নভেম্বর আহত মামুনুর রশিদ কোতোয়ালি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন, যেখানে লিপি খান ১৭৯ নম্বর আসামি হিসেবে এজাহারভুক্ত হন।
ওসি আতাউর রহমান জানান, লিপি খানকে গুলশান থানায় রাখা হয়েছে এবং আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাঁকে রংপুরে এনে আদালতে তোলা হবে।
এই গ্রেপ্তার নিয়ে নানা আলোচনা তৈরি হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলার পরপরই লিপি খানের গ্রেপ্তার কতটা স্বাভাবিক, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!