বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনো পর্যন্ত চারজন ভিসির আমল শেষে পাচঁজনে পড়লেও দেখা মেলেনি সেশনজট নিরসনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখা কোনো ভিসির।বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ টি বিভাগের প্রায় ২০ টি বিভাগই সেশন জটে জর্জরিত,এতে করে হতাশ হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
দেশের ৩৩ তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স এখন এক যুগ পেরিয়ে গেছে।সময় কাটলেও সঙ্কটের ঘোর কাটা তো দূর বরং আরো ঘোরতর হয়েছে।দিনে দিনে গুরুতর সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে এই সেশনজট। যাতে করে মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী আজিজুর রহমান বলেন “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু ডিপার্টমেন্টে সেশনজট দীর্ঘদিন ধরেই আছে। যা দিনের পর দিন ডিপার্টমেন্টসহ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্ব পালনের সদিচ্ছার অভাবে আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই সেশনজটের ফলে আমাদের শিক্ষাজীবন অহেতুক দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সেশনজটের কারণে আমাদের মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপের বিলম্বতো ঘটতেছেই এবং পাশাপাশি পেশাগত জীবনে প্রবেশেও বিলম্ব ঘটবে। একজন শিক্ষার্থী দীর্ঘ জার্নি শেষে, আকাশচুম্বী স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ভর্তি হয় । পাশাপাশি তাকে নিয়ে বাবা-মা আর পরিবারের মানুষগুলোও স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। কিন্তু এই স্বপ্ন সেশনজটের মতো কালো থাবা গ্রাস করার কারনে পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন"বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট একটি আতঙ্কের নাম হয়ে দাড়িয়েছে,বর্তমানে অধিকাংশ ডিপার্টমেন্টই সেশনজটের কবলে যার ফলশ্রুতিতে আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে পতিত হচ্ছি চরম হতাশায়,আমি মনে করি এই সেশনজটের মুলে রয়েছে শিক্ষকদের কাজের প্রতি চরম অনিহা, ক্লাস এবং পরিক্ষা সময় মতো না নেয়া,রেজাল্ট পাবলিসড্ করতে দেরি করা। ভিসির চেম্বারে রেজাল্ট আটকে থাকাসহ সব মিলিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় চলছে যেনো অদ্ভুত উটের পিঠে।একজন স্বাধারণ শিক্ষার্থী হিসাবে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস ও পরিক্ষা এবং দ্রুত সময়ের ভিতরে রেজাল্ট পাবলিশ করে সেশনজট মুক্ত একটা বিশ্ববিদ্যালয় আশা করছি।"
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, "বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু আমি পর্যবেক্ষণ করেছি এখনও করছি।বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরশনে প্রত্যক্ষভাবে কাজ শুরু করা হবে,পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সাথে নিয়ে খুব শীঘ্রই সুষ্ঠুভাবে আগানো হবে।" বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডীন জনাব সুব্রত কুমার দাস জানান " সেশনজট শিক্ষার্থীদের জন্য অভিশাপসরূপ।বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্বে অবহেলার কারনে এটি সৃষ্টি হয়।সেশনজট নিরশনের লক্ষে আমরা শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার শুরু হওয়ার সাথে সাথে একাডেমিক ক্যালেন্ডার দিয়ে শুরু করে থাকি যাতে করে রূপরেখা দেয়া যায়।আরো বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব করার জন্য,একাডেমিক্যালি দ্রুত এবং সঠিক সময়ে শেষ করার জন্য"
উল্লেখ্য যে পাঁচই আগস্টের পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি বদরুজ্জামান ভূঁইয়া সেশনজট নিরশন নিয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিলেও তেমন কোন আশানুরূপ ফলাফল দিয়ে যেতে পারেননি(এবছরই তিনি রুটিন দায়িত্ব থেকে দায়িত্ব পেয়েছিলেন এবং ২০ আগষ্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!