শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।তাদের আলাদা আলাদা কর্মসূচিতে উত্তাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশনসংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছে।
গত রবিবারের ঘোষণা অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি। অন্যদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন ও ববির ১১-২০ কল্যাণ পরিষদও বিভন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মবিরতি পালন করেন।
এদিকে শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সোমবার (১ জুলাই) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের গ্রাউন্ডে এ কর্মসূচিগুলো পালন করেছেন তারা।
এ সময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তারেক মাহমুদ আবীর জানান, আমরা দীর্ঘদিন একটি শান্তিপূর্ণভাবে এই পেনশনসংক্রান্ত 'বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন' প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছি। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একই যৌক্তিক দাবি জানিয়ে আসছে।আমাদের দাবি যখনই সরকার মেনে নিবে,আমরা তখনই আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থেকে সরে আসবো।
‘বৈষম্যমূলক’ প্রত্যয় স্কিম থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহকে বাদ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে।
আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অন্তভূক্তিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের আহ্বানে ১, ২, ৩ ও ৪ জুলাই পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন। অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি বাহাউদ্দিন গোলাপ জানান, আমরা আমাদের দাবি অনেক আগে থেকেই জানিয়ে আসছি। সর্বজনীন পেনশন স্কিম বা বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন' প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা।আমরা স্মারক লিপি,মানববন্ধন করেছি।আমি মন করি,সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে এ ধরণের বৈষম্য দুর করার পদক্ষেপ নিবেন।যদি আমাদের দাবির সমাধান না করা হয়,তাহলে আগামি ৭ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি বা লাগাতার কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রণীতব্য অভিন্ন নীতিমালা বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীরাও কর্মবিরতি পালন করেছে। ১১-২০ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. আরিফ সিকদার জানান, আমাদের কর্মবিরতি চলমান থাকবে,যতদিন আমাদের দাবি বাস্তবায়িত না হবে।
এদিকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকুরিতে কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বেলা ১২ টা থেকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি উথাপন করেন।দাবি আদায় না হলে আরো কঠোর আন্দোলনের যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। ১৮' এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। দূর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজয় শুভ জানান, ২০১৮ সালের রক্তের দাগ আজও শুকায় নাই। টিয়ারশেলের দাগ আজও শুকায় নাই। আমাদের সেই সংগ্রাম ব্যর্থ হওয়ার পথে। আমাদের উপর হাইকোর্ট যে রায় চাপিয়ে দিয়েছে আমরা সেই রায় মানি না। যারা কোটাধারী মেধাবী পরিচয় দিতে চান, তাদেরকে বলতে চাই, এই পরিচয় খুবই লজ্জার।
বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নূর জানান, স্বৈরচারী বিরোধী আন্দোলনে যেমন নুর রাস্তায় নেমে পিঠে লিখেছিলো স্বৈরাচার নিপাত যাক,ঠিক তেমনি বৈষম্য দুর করে কোটা নিপাত করা হবে।তিনি জানান, বৈষম্য দুর করার জন্যে ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা হয়েছিলো।আবার সেই বৈষম্য শুরু হয়ে গেছে।কোটা বহাল রেখে দেশে মেধাবী শূন্য করা হচ্ছে।এটা অবিলম্বে বাতিল চান তারা।
আন্দোলনকারী অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ভূমিকা সরকার বলেন, কোনো বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে ৫৬ শতাংশ কোটা থাকতে পারে না। তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার যেখানে কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছিলো হাইকোর্ট কেন সেই কোটাকে আবার পুনর্বহাল করলো আমরা জানি না। আমি নিজে মেয়ে হয়েও বলছি,আমাদের মেয়েদের জন্য আলাদা কোটার প্রয়োজন নেই।নারী পুরুষ আমরা সবাই সমান।কোটা বাতিল হোক এটাই আমাদের চাওয়া।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম,সিরাজুল ইসলাম,লোকপ্রশাসন বিভাগের মোঃ মিরাজ হোসেন, নাইমুর রহমান ও ইংরেজি বিভাগের তামিম প্রমুখ।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!