রুহুল আমীন খন্দকার, বিশেষ প্রতিনিধি :
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও শিক্ষা ক্যাডারকে বিশেষায়িত পেশা হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। তাই বিশেষায়িত পেশার দাবি করেছে রাজশাহী অঞ্চলের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডাররা।
আজ মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং) বেলা ১১ টার দিকে রাজশাহী কলেজ শিক্ষক মিলনায়তনে রাজশাহী অঞ্চলের বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতৃবৃন্দ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমন দাবি জানান।
এদিন ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, পদোন্নতি, পদসৃজন, স্কেল আপগ্রেডেশন ও আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসন'সহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ন্যায্য দাবিসমূহ আদায়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতৃবৃন্দ।
তারা জানান, বর্তমান সময়ে শিক্ষা ক্যাডার আবারও বেশ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়েছে। সে প্রতিকূলতা দূর করার ক্ষেত্রে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শিক্ষা ক্যাডারদের বঞ্চনা আর বৈষম্যের মাধ্যমে এ পেশার কার্যক্রমকে সংকুচিত করা হয়েছে। এ পেশাকে গ্রাস করছে অদক্ষ অপেশাদাররা যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনের পরিপন্থী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যেসকল অভীষ্ট নির্ধারণ করেছে সেগুলো অর্জনে তিনিও শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে তাই তিনি স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। এগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজন জাতির পিতার দর্শনের বাস্তবায়ন।
বক্তারা বলেন, প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষাস্তর সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের নবম গ্রেডের উপরে সকল পদ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত। এসব পদে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা বাদে অন্য কারও পদায়নের সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভুতদের অপসারণের দাবী জানিয়েছি কিন্তু সেটি করা হয়নি। উপরন্তু আমরা লিখিতভাবে আপত্তি জানাবার পরেও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ৫১২ টি পদ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিল বহির্ভূত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এটি সুস্পষ্টতই শিক্ষা ক্যাডারের অস্তিত্বের উপর আঘাত। আমরা এসকল কর্মকান্ডকে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার শামীল মনে করি। শিক্ষা ক্যাডারকে অন্ধকারে রেখে এই বিধি করার এখতিয়ার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেই। আমরা শিক্ষা ক্যাডার বিরোধী এসকল কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে অবিলম্বে এবিধি বাতিলের দাবী জানান হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির যুগ্ম মহাসচিব প্রফেসর ড. ইলিয়াছ উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হলো শিক্ষা। প্রশাসনসহ অন্যান্য সেক্টরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অফিস রয়েছে। কিন্তু জেলা ও উপজেলায় শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য শক্তিশালী শিক্ষা প্রশাসন গড়ে ওঠেনি। বর্তমান সরকার প্রতিটি উপজেলায় এক বা একাধিক কলেজ সরকারি করেছে, সেখানে উচ্চশিক্ষা চালু আছে। উপজেলায় ও জেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থাকলেও উচ্চ শিক্ষা দেখভালের জন্য কোন কর্তৃপক্ষ নেই। দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত জেলা ও উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাঃ আব্দুল খালেক, নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কালাচাঁদ শীল, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আমেনা আবেদীন, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দীকা, শহীদ বুদ্ধিজীবী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ আনারুল হক প্রাং, টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শওকত আলী খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সচিব মোস্তফা নাসিরুল আযম, নির্বাহী সদস্য প্রদীপ কুমার মহন্ত, মোঃ আব্দুস সালাম ও খালেদা ইয়াসমিনসহ রাজশাহী জেলার বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ সদস্যরা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!