শবে বরাত মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ বরকতময় ও পবিত্র রাত। ইসলামের শিক্ষা অনুসারে, এই রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য ক্ষমার দরজা উন্মুক্ত করেন এবং তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। শাবান মাসের ১৫তম রাতকে শবে বরাত বলা হয়, যা বিশেষভাবে ইবাদত, তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শবে বরাতের তাৎপর্য
"শব" শব্দের অর্থ রাত এবং "বরাত" অর্থ মুক্তি। অর্থাৎ শবে বরাত হলো মুক্তির রাত, যেখানে আল্লাহ তার অসংখ্য বান্দাকে গুনাহ থেকে মুক্তির সুযোগ দেন। এ রাতকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের মধ্যে গভীর শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় অনুভূতি বিদ্যমান। ইসলামি শিক্ষা মতে, এই রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের আমল পর্যালোচনা করেন, তাদের জন্য রহমতের দরজা খুলে দেন এবং জীবন ও রিজিকের বিধান নির্ধারণ করেন।
শবে বরাতে আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত
হাদিসে উল্লেখ আছে, শবে বরাতের রাতে আল্লাহ আসমান-জমিনের দিকে দৃষ্টি দেন এবং বলেন,
"হে আমার বান্দারা! কেউ ক্ষমা চাইলে আমি তাকে ক্ষমা করব, কেউ রিজিক চাইলে আমি তাকে রিজিক দেব।" (শুআবুল ঈমান, হাদিস নং ৩৫২৭)
এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে আরও হাদিসে পাওয়া যায়,
"যখন শাবান মাসের পনেরতম রাত আসে, আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে আসমানে আসেন এবং বান্দাদের পাপ ক্ষমা করেন।" (মুসলিম: ১৩৪৩)
এই বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, শবে বরাত শুধুমাত্র ইবাদতের রাত নয়, বরং এটি আল্লাহর ক্ষমা, দয়া ও অনুগ্রহ লাভের এক অনন্য সুযোগ।
কী ইবাদত করা উচিত?
শবে বরাতে বিশেষ কিছু ইবাদত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। যেমন:
- নফল নামাজ: অনেকে রাতে নফল নামাজ আদায় করেন এবং কোরআন তিলাওয়াত করেন।
- দোয়া ও তওবা: আল্লাহর কাছে নিজের ও মুসলিম উম্মাহর জন্য ক্ষমা ও কল্যাণ কামনা করা উচিত।
- রোজা রাখা: শবে বরাতের পরের দিন নফল রোজা রাখা মুস্তাহাব (সুন্নাতের নিকটবর্তী)।
- দরিদ্রদের সাহায্য: যারা অভাবগ্রস্ত, তাদের সহায়তা করাও এ রাতের অন্যতম আমল হতে পারে।
শবে বরাতের সুন্নাতি দোয়া
এ রাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হলো—
اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া, ফাআফু আন্নি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি পরিপূর্ণ ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন।
এ রাতের শিক্ষা ও গুরুত্ব
শবে বরাত আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধির এক বিরল সুযোগ। এই রাতে ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ তার পূর্বের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারে এবং ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য কল্যাণ কামনা করতে পারে।
তাই, আমাদের উচিত একাগ্রচিত্তে ইবাদত করা, তওবা করা এবং আল্লাহর রহমত কামনা করা। শবে বরাতের মূল শিক্ষা হলো— আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস স্থাপন করা, আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নৈতিক উন্নয়ন ঘটানো এবং মানবতার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র রাতে ক্ষমা ও রহমত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন!
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!