শবে বরাত ইসলামিক সংস্কৃতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় রাত। প্রতি বছর শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতকে শবে বরাত বলা হয়। এই রাতটি ‘লাইলাতুল বরাত’ নামেও পরিচিত, যার অর্থ মুক্তি ও সৌভাগ্যের রজনী। এই রাতটি মুসলিমদের জন্য বিশেষ ইবাদত, দোয়া ও আত্মশুদ্ধির সময় হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, শবে বরাতের পরের দিন অর্থাৎ ১৫ শাবান রোজা রাখা সুন্নত নাকি এটি শুধুই প্রচলিত একটি ধারা?
মাসের তিন দিন রোজার সুন্নত বিধান
হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) প্রতি চান্দ্র মাসে তিন দিন রোজা রাখতেন এবং সাহাবীদেরও এ রোজা রাখতে উৎসাহিত করতেন। (তিরমিজি ৭৬০; ৭৬৩)
এই তিন দিনের রোজা মাসের যে কোনো তিন দিন রাখা যায়, তবে বিশেষত ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখার প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই তিন দিনকে বলা হয় ‘আইয়ামে বীজ’, যার অর্থ চাঁদের আলোয় উজ্জ্বল রাতের দিন। (তিরমিজি ৭৬১)
১৫ শাবানের রোজার বিশেষ ফজিলত?
শাবান মাসের ১৫ তারিখ রোজা রাখার বিষয়ে একাধিক হাদিস পাওয়া যায়। তবে মুহাদ্দিসগণ বলেন, এ বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে পাওয়া হাদিসগুলোর অধিকাংশই দুর্বল (দায়েফ)। ইবনে মাজাহর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘শবে বরাতের পরের দিন রোজা রাখো।’ (ইবনে মাজাহ ১৩৮৪) তবে এই হাদিসটি সনদগত দিক থেকে দুর্বল হওয়ায় একে সুন্নত বা মুস্তাহাব হিসেবে চিহ্নিত করা সঠিক হবে না।
তবে যেহেতু ১৫ তারিখ আইয়ামে বীজের অন্তর্ভুক্ত, তাই ১৩ ও ১৪ তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে এই রোজা রাখা নিঃসন্দেহে সুন্নত হবে।
শুধু ১৫ তারিখ রোজা রাখা যাবে?
অনেকেই প্রশ্ন করেন, কেবল ১৫ তারিখ রোজা রাখা যাবে কি না? ইসলামী ফিকহবিদদের মতে, হ্যাঁ, চাইলে ১৫ তারিখ এককভাবেও রোজা রাখা যায়। তবে এটিকে স্বতন্ত্রভাবে বিশেষ কোনো সুন্নত মনে করা সঠিক নয়। উত্তম হচ্ছে, ১৩, ১৪ ও ১৫—এই তিন দিন একসঙ্গে রোজা রাখা।
মুফতি তাকি উসমানীর ব্যাখ্যা
বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার মুফতি তাকি উসমানী এ বিষয়ে বলেন, ‘শবে বরাতের পরের দিন রোজা রাখার পক্ষে নির্ভরযোগ্য মাত্র একটি হাদিস পাওয়া যায়, যা সনদগতভাবে দুর্বল। তাই একে সুন্নত বা মুস্তাহাব বলা অনেক আলেমের দৃষ্টিতে অনুচিত। তবে শাবান মাসজুড়ে রোজার অনেক ফজিলত রয়েছে, যা বিভিন্ন হাদিসে পাওয়া যায়।’
তবে রমজান মাসের প্রস্তুতির জন্য নবীজি (স.) ২৮ ও ২৯ শাবান রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন, যেন মানুষ রমজানের জন্য সতেজ ও প্রস্তুত থাকে। (বুখারি, মুসলিম)
শেষ কথা
শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোজা রাখা যাবে, তবে এটি আলাদাভাবে কোনো সুন্নত রোজা নয়। বরং এটি আইয়ামে বীজের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ১৩ ও ১৪ তারিখের সঙ্গে মিলে রাখা উত্তম। মুসলিমদের উচিত এ বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান রাখা এবং ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!