সদকাতুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ঈদুল ফিতরের দিন আদায় করা হয়। এটি জাকাতের একটি ধরন, যা মূলত দরিদ্র ও অভাবী মানুষের সহযোগিতার জন্য নির্ধারিত হয়েছে। রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদায়ে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং উম্মতকে এর নিয়ম-কানুন সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন। নবীজির যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মুসলিম সমাজ এই ইবাদত পালন করে আসছে।
সদকাতুল ফিতর আদায়ের সময়
ফিতরা ঈদের নামাজের পূর্বেই প্রদান করা উত্তম। তবে, নামাজের পূর্বে দিতে না পারলে পরে দিলেও আদায় হবে, যদিও সওয়াব কিছুটা কম হবে। এমনকি রমজান মাসেই প্রদান করা যায়। তবে, ঈদের দিনের পর ফিতরা প্রদানে বিলম্ব করা মাকরূহ হিসেবে গণ্য হয়। (বুখারি ১৫০৩)
ফিতরা আদায়ে প্রচলিত ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তি
আমাদের সমাজে সদকাতুল ফিতর আদায় নিয়ে নানা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। এগুলোর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য ভ্রান্তি নিম্নে তুলে ধরা হলো:
১. শুধু ধনী ব্যক্তিদের জন্য ফিতরা ফরজ: অনেকে মনে করেন, শুধুমাত্র বড়লোকদের ওপর ফিতরা ফরজ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, যার কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ আছে এবং মৌলিক চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকে, তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব।
২. শিশুদের পক্ষ থেকে ফিতরা দেওয়া লাগে না: এটি একটি ভুল ধারণা। যেসব শিশুদের অভিভাবক সামর্থ্যবান, তাদের পক্ষ থেকে ফিতরা প্রদান করা অভিভাবকের দায়িত্ব।
৩. টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা যাবে না: মূলত, ফিতরার নির্ধারিত পরিমাণ খাদ্যশস্য অথবা সমমূল্যের টাকা প্রদান করা যায়। তবে হাদিস অনুসারে খাদ্যশস্য প্রদানই উত্তম।
৪. ফিতরা ঈদের নামাজের পরও যেকোনো সময় দিলেও চলে: হাদিস অনুযায়ী, ঈদের নামাজের আগেই ফিতরা প্রদান করা উত্তম। ঈদের নামাজের পর ফিতরা দেওয়া হলে তা সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে।
সঠিকভাবে ফিতরা আদায়ের উপায়
১. ঈদের নামাজের পূর্বে ফিতরা প্রদান করুন। ২. খাদ্যশস্য বা এর সমমূল্যের টাকা প্রদান করুন। 3. পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ থেকে ফিতরা প্রদান করুন। ৪. গরিব ও দুস্থদের মাঝে যথাযথভাবে বিতরণ করুন।
সঠিকভাবে সদকাতুল ফিতর আদায় করলে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মানুষ উপকৃত হবে এবং ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। তাই, সকলের উচিত এই ইবাদত যথাযথভাবে আদায় করা এবং প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো থেকে দূরে থাকা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!