মানুষের জীবনের শুরু হয়েছিল জান্নাতে, এবং আখেরাতে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে, তারা পুনরায় জান্নাতে ফিরে যাবে। পৃথিবীতে পাঠানোর পেছনে উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। এ জীবন এক ক্ষণস্থায়ী সময়, যা বিভিন্ন পরীক্ষায় ভরা। যারা নিজেদের আমল ও ঈমান দিয়ে এ পরীক্ষায় সফল হবে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের অনন্ত সুখ।
অন্যদিকে, যারা শয়তান ও নিজের নফসের প্ররোচনায় জীবন কাটায়, তারা নিজেদের জান্নাতের সুযোগ হারিয়ে জাহান্নামে ঠেলে দেয়।
জান্নাত: অফুরন্ত সুখের স্থান
কোরআনে আল্লাহ বলেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মেনে চলে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত হয় এবং তারা চিরকাল সেখানে থাকবে। এটি বিরাট সাফল্য।” (সুরা নিসা: ১৩-১৪)
মুমিনদের জন্য জান্নাত হলো অগণিত নেয়ামত আর অফুরন্ত সুখের ঠিকানা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, জান্নাতের সবচেয়ে নিচু মর্যাদার অধিকারীর জন্যও যে স্থান নির্ধারিত, সেটি হবে ১০টি দুনিয়ার সমান। (মুসলিম: ১৮৬)
নবীজির (সা.) বর্ণনায় জান্নাতের সৌন্দর্য
রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাত সম্পর্কে বলেছেন, এর প্রাসাদ স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইট দিয়ে তৈরি, এর গাঁথুনিতে থাকবে মিশক ও আম্বরের সুগন্ধ। মাটি হবে জাফরানের মতো। যারা তাতে প্রবেশ করবে, তারা কখনও হতাশ হবে না, তাদের যৌবন শেষ হবে না, এবং তারা চিরকাল আনন্দে থাকবে। (তিরমিজি: ২৫২৬)
মিরাজের সফরে নবীজিকে জান্নাত দেখানো হয়েছিল। তিনি হিরা-মুক্তার প্রাসাদ এবং সুগন্ধিময় নহর ‘কাওসার’ দেখেন, যা বিশেষভাবে তাঁর জন্য সংরক্ষিত। এছাড়াও তিনি জান্নাতের চারটি নদী দেখতে পান, এর মধ্যে দুইটি পৃথিবীতে এবং দুইটি জান্নাতে প্রবাহিত।
কোরআনের আলোকে জান্নাতের নাম ও বৈশিষ্ট্য
পবিত্র কোরআনে জান্নাতের আটটি নাম উল্লেখ রয়েছে, প্রতিটির রয়েছে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। যেমন:
- জান্নাতুল ফিরদাউস: এটি মুমিনদের চিরস্থায়ী বাসস্থান।
- দারুল মাকাম: যেখানে কোনো কষ্ট বা ক্লেশ স্পর্শ করবে না।
- দারুস সালাম: শান্তির আলয়, যেখানে আল্লাহ মুমিনদের আহ্বান জানান।
- জান্নাতুল আদন: চিরস্থায়ী বসবাসের স্থান।
জান্নাতে মানুষের একমাত্র আফসোস
জান্নাতে প্রবেশের পর মুমিনরা দুনিয়ার কোনো কষ্ট বা অভাবের কথা মনে করবে না। তবে আফসোস থাকবে একটাই—পৃথিবীতে যে সময়টা আল্লাহর স্মরণ ছাড়া অপচয় হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“জান্নাতবাসীরা দুনিয়ার কোনো কিছুর জন্য আফসোস করবে না, শুধু সেই সময়ের জন্য করবে, যা আল্লাহর স্মরণ ছাড়া অতিবাহিত হয়েছে।” (বায়হাকি: ৫০৯)
জান্নাতে প্রবেশের প্রস্তুতি
জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামত লাভের জন্য মুমিনদের পৃথিবীতে নেক আমল করতে হবে। শয়তান ও নফসের ধোঁকা থেকে নিজেকে রক্ষা করে আল্লাহর আদেশ এবং রাসুলুল্লাহর সুন্নাহ অনুসরণ করাই জান্নাতের পথ।
আসুন, আমরা নিজেদের জীবনকে আল্লাহর নির্দেশনায় পরিচালিত করি, পাপ থেকে বিরত থাকি এবং জান্নাতের অনন্ত সুখ লাভের যোগ্যতা অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জান্নাতবাসী হওয়ার তৌফিক দিন। আমিন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!