ঘুম শুধু শারীরিক বিশ্রামের মাধ্যম নয়, বরং ইসলামের নির্দেশিত পদ্ধতিতে ঘুমালে তা ইবাদতে পরিণত হতে পারে। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমানোর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল করতেন, যা অনুসরণ করলে শারীরিক ও আত্মিক কল্যাণ লাভ সম্ভব। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, সঠিক নিয়মে ঘুমালে মানুষ নিরাপত্তা ও সাওয়াবের অংশীদার হতে পারে। নিচে নবীজি (সা.)-এর ঘুমের আগে করা পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ আমল তুলে ধরা হলো—
১. দোয়া পড়ে শোয়া
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শোয়ার পর আল্লাহর নাম নেয় না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা নেমে আসবে।’ (আবু দাউদ, ৪৮৫৬)
তাই ঘুমানোর আগে কিছু নির্দিষ্ট দোয়া পড়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সংক্ষিপ্ত একটি দোয়া হলো—
“আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! তোমার নামেই আমি শয়ন করছি এবং তোমার দয়ায় আবার জাগব।”
২. সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে শরীরে ফুঁ দেওয়া
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘প্রতি রাতে নবীজি (সা.) শোবার আগে দুই হাত একত্রিত করে তাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। তারপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যতটুকু সম্ভব পুরো শরীরে তিনবার হাত বোলাতেন।’ (বুখারি, ৫০১৭)
৩. আয়াতুল কুরসি পাঠ করা
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি শয্যা গ্রহণ করবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা তোমার পাহারায় থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার ধারে-কাছে আসতে পারবে না।’ (বুখারি, ২৩১১)
৪. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ঘুমানোর আগে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত (আমানার রসুলু...) পাঠ করবে, তা সারারাতের জন্য তাকে নিরাপত্তা দেবে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যদি কেউ এ দুটি আয়াত পাঠ করে, তবে এটিই তার জন্য যথেষ্ট।’ (বুখারি, ৫০৪০)
৫. সুরা মুলক পড়া
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোরআনে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যা কারও জন্য সুপারিশ করলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (তিরমিজি, ২৮৯১)
এই সুরাটি হলো সুরা মুলক (তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক)।
শেষ কথা
নবীজির (সা.) সুন্নত মোতাবেক ঘুমানোর এই আমলগুলো শুধু আখিরাতের জন্য কল্যাণকর নয়, বরং দেহ ও মনের প্রশান্তি এনে দেয়। তাই প্রতিদিন শোবার আগে এই আমলগুলো করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ঘুমকে ইবাদতে রূপান্তরিত করতে পারি।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!